ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদো সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কিছু কার্টুন প্রকাশ করে। তেহরান ওইসব কার্টুনকে অপমানজনক বলে মনে করে, এবং বুধবার ফ্রান্সকে এর কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে ইরান।
সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটি ইরানে গত তিন মাস ধরে চলা প্রতিবাদ আন্দোলনের সমর্থনে ডিসেম্বরে শুরু হওয়া একটি প্রতিযোগিতার অংশ হিসাবে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে উপহাস করে কয়েক ডজন কার্টুন প্রকাশ করে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এক টুইট বার্তায় বলেছেন, "ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফরাসি ম্যাগাজিনের কার্টুন প্রকাশনার মতো অপমানজনক এবং অশোভন কাজ, কার্যকর এবং চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।"
তবে, ঠিক কী ধরনের পরিণতি ভোগ করতে হবে, তা উল্লেখ না করে তিনি আরও বলেন, "আমরা ফরাসি সরকারকে তার সীমার বাইরে যেতে দেব না। তারা অবশ্যই ভুল পথ বেছে নিয়েছে।"
পরে বুধবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা ফরাসি রাষ্ট্রদূত নিকোলাস রোশকে জরুরি তলব করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, "বাকস্বাধীনতার অজুহাতে অন্যান্য মুসলিম দেশ ও জাতির পবিত্রতা অবমাননার কোনও অধিকার ফ্রান্সের নেই।"
তিনি আরও বলেন, "ফরাসী প্রকাশনার অগ্রহণযোগ্য আচরণের নিন্দায় দেশটির সরকারের ব্যাখ্যা এবং ক্ষতিপূরণমূলক পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে ইরান।"
সাম্প্রতিক বিতর্কের ইস্যুতে খামেনি এবং তাঁর মতো অন্যান্য ধর্মগুরুদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন রকম যৌন চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে কার্টুনগুলোতে। অন্যান্য কার্টুন বিক্ষোভ দমন করার কৌশল হিসেবে কর্তৃপক্ষের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ব্যবহারকে দেখিয়ে দিয়েছে।
রিস নামে পরিচিত শার্লি এবদোর পরিচালক লরেন্ট সোরিসিউ এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, "এটি ছিল ইরানী পুরুষ ও নারীদের জন্য আমাদের সমর্থন দেখানোর একটি উপায়, যারা ১৯৭৯ সাল থেকে তাদের ধর্মতন্ত্রের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল।"
উল্লেখ্য, বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির উত্তরসূরি খামেনিকে আজীবনের জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে তিনি, এমনকি ইরানের অভ্যন্তরে তার সমালোচনাও নিষিদ্ধ।
১৯৮৯ সালে খোমেনি একটি আলোচিত ধর্মীয় ডিক্রি বা ফতোয়া জারি করেন, যাতে মুসলমানদেরকে তিনি ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদিকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রুশদির লেখা উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসকে ধর্ম অবমাননামূলক লেখা বলে মনে করেছিলেন খোমেনি।
গত বছর নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে লেখককে ছুরিকাঘাত করা হলে, অনেক কর্মী এর জন্য ইরানকে দায়ী করেন, কিন্তু তেহরান ওই হামলার সাথে তাদের কোনো যোগসূত্র থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
নারীদের জন্য দেশটির কঠোর পোষাক কোড লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া একজন ইরানী কুর্দি মাহসা আমিনি পুলিশি হেফাজতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মারা গেলে, তিন মাস ধরে চলা তুমুল বিক্ষোভে ইরান সরকারের মসনদ কেঁপে উঠেছে৷
শার্লি এবদো’র প্যারিস অফিসে মারাত্মক হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে পত্রিকাটি একটি বিশেষ সংস্করণে ব্যঙ্গচিত্রগুলি প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে কিছু বিখ্যাত কার্টুনিস্টের আঁকা চিত্র কর্মও ছিল। ওই হামলায় ১২ জন নিহত হয়।