আস্থা ও সুশাসনের অভাবে হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: মত অর্থনীতিবিদদের

আস্থা ও সুশাসনের অভাবে হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত: মত অর্থনীতিবিদদের

আস্থা ও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত হুমকির মুখে পড়েছে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা আরও বলেছেন যে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদরা এমন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান।

বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ; অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনুর; বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন; অধ্যাপক আবু আহমেদ; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; বার্জার পেইন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম।

সালেহ উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়-সহ নীতি বাস্তবায়ন কঠোরভাবে পরিচালনা করতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমার বিশ্বাস। আর, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে সঠিক নীতি নিতে হবে। তারা কারো মুখের দিকে তাকাবে না, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এটি দাবি করে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

একটি উদাহরণ তুলে ধরে সালেহ উদ্দিন বলেন, “২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছরে মোট নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। অর্থনীতি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সঠিক সংস্কার করতে হবে অথবা এর পতন দেখতে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “গত মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ২৭ শতাংশ বেড়েছে। কারণ মানুষ তাদের অর্থের নিরাপত্তার জন্য ভালো ব্যাংক খুঁজছে। সুতরাং, আস্থা এবং সুশাসন একটি ব্যাংককে বাঁচাতে পারে। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য ঋণ কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন, পর্যবেক্ষক নিয়োগ যথেষ্ট নয়।”

ড. জাহিদ বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি বাহ্যিক প্রভাবে তৈরি হয় না, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জিডিপি বাড়ছে, অর্থনীতির সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে ‘অর্থনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনা: সিপিডির নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বিশেষ উল্লেখ অ্যাকাউন্টে ঋণ, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সহ ঋণ এবং পুনঃনির্ধারিত ঋণ অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রকৃত এনপিএল অনেক বেশি হবে।”

সিপিডি উল্লেখ করেছে, “রাজনৈতিক সংযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালকদের নিয়োগ, রাজনৈতিক কারণে মঞ্জুর করা ঋণ, ঋণ পরিশোধের রেকর্ড খারাপ থাকা সত্ত্বেও ঋণের পুনঃতফসিল করা এবং করের বোঝা কমাতে ঋণ বাতিল করা এবং ব্যাংকের ক্লিন ব্যালেন্স শীট, বাংলাদেশে উচ্চহারের এনপিএল এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্স, দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক খেলাপিদের দেওয়া নমনীয়তা, কুঋণের এই উচ্চ পরিমাণের জন্য দায়ী।