চকলেট, কাঠ এবং পাম তেলের মতো পণ্য রপ্তানিকারী সংস্থাগুলি শীঘ্রই এই পণ্যগুলি যে বন উজাড়ের সাথে যুক্ত নয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন কঠোর নিয়মের মুখোমুখি হবে। এমন বিধি নিষেধ ইউরোপ এবং বিশ্বের জন্য এই প্রথম - এবং তা কার্যকর হলে, বিশ্বব্যাপী এক অভাবনীয় নজির স্থাপন করবে।
মঙ্গলবার ভোরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক অনুমোদিত যুগান্তকারী এই আইনটিকে পরিবেশবাদীরা স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ এর সংসদ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির দ্বারা অনুমোদিত হওয়া দরকার, আগামী বছরের গোড়ার দিকে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র অ্যাডালবার্ট জাহানজ এই পদক্ষেপকে পরিবেশ এবং সবুজ ইউরোপের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
খসড়া আইনে কফি, কোকো, মাংস, পাম তেল এবং সয়া-এর মতো পণ্য আমদানিকে লক্ষ্য করা হয়েছে, যেসব পণ্য বন উজাড়ের সঙ্গে যুক্ত। কোম্পানীগুলিকে দেখাতে হবে, এই দ্রব্যগুলো কোথায় এবং কখন উত্পাদিত হয়েছিল এবং ২০২০ সালের পর, বন উজাড় করা জমিতে সেগুলি জন্মানো হয়নি, সেই সত্যতাও যাচাই করতে হবে।
জাহানজ বলেছেন, "আমি মনে করি এই আইনটি কতটা যুগান্তকারী তা এখুনি বোঝা মুশকিল, কারণ, এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বে এই প্রথম।"
গ্রিনপিসের ইউরোপীয় ইউনিটের ব্রাসেলস-ভিত্তিক মুখপাত্র জন হাইল্যান্ড বলেছেন, "এই পদক্ষেপ পরিবেশ সুরক্ষায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এর ফলে, কিছু চেইনসো এবং বুলডোজার বন পরিষ্কার করা বন্ধ করবে, সেই সাথে ইউরোপে বন উজাড় করে লাভবান হওয়া কোম্পানিগুলির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করতে সাহায্য করবে।"
তবে হাইল্যান্ড এও বলেছে, আইনটিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। তিনি বলছেন, পরিবেশবাদীরা বনের ক্ষয়ক্ষতির সংজ্ঞাটিকে দুর্বল বলে মনে করেন, কারণ এতে জ্বালানী কাঠ ব্যবহারকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই দেখা যায়, অনেক জায়গায় এখনো নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সবুজ গোষ্ঠীগুলি বলছে, তারা আশা করছে জলাভূমি এবং বিশেষ করে সাভানার মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তৃণভূমিগুলোতে প্রাকৃতিক পরিপার্শ্বকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিধিনিষেধগুলিকে আরও প্রশস্ত করা হবে।
গ্রিনপিস বলছে, তারা বিশ্বাস করে এই পদক্ষেপটি অন্যান্য দেশ এবং সংস্থাগুলিকে অনুরূপ কাঙ্খিত অধ্যবসায়ের মান নিশ্চিত করতে প্ররোচিত করবে।
বিশ্বব্যাপী বন উজাড় একটি বিশাল এবং উদ্বেগজনক সমস্যা - বিশেষ করে আমাজন এবং কঙ্গো অববাহিকায়, যেখানে বনভূমি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
জাতিসংঘের অনুমান গত তিন দশকে বিশ্বে প্রায় ৪২ কোটি হেক্টর বনভূমি বিলীন হয়ে গেছে।