১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে 'গণহত্যা' ঘোষণা করতে কংগ্রেস সদস্যদের প্রস্তাব পেশ

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস এর লেখা প্রতিবেদন জেনোসাইড। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৩ জুন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো পাকিস্তানি হানাদারদের দমন-পীড়ন ও নিষ্ঠুরতার চিত্র বিশ্বের সামনে উঠে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য স্টিভ চ্যাবট ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য রো খান্না যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন।

চ্যাবট বলেছেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল সেটি ভুললে চলবে না। ওহাইও’র ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্টে আমার হিন্দু ভোটারদের সহায়তায় রো খান্না ও আমি হিন্দুসহ বাঙালিদের ওপর চালানো ব্যাপক নৃশংসতা, নির্দিষ্ট করে বললে, গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য প্রস্তাব পেশ করেছি।”

চ্যাবোট জানান, তারা অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে গণহত্যার লাখ লাখ মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেবেন না। তিনি টুইটারে লিখেন, “গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে শক্তিশালী করে; আমাদের সহকর্মী আমেরিকানদের জানায় এবং এই ধরনের অপরাধ যে সহ্য করা বা ভুলে যাওয়া হবে না, তা অপরাধীদের জানতে দেয়।”

রো খান্না বলেন, “১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে প্রথম প্রস্তাব পেশে রিপাবলিকান স্টিভ চ্যাবোটের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত; যেখানে আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভুলে যাওয়া গণহত্যায় লাখ লাখ বাঙালি, হিন্দু নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।”

“১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি” শিরোনামের ৮ পৃষ্ঠার প্রস্তাবে পাকিস্তান সরকারের এই গণহত্যার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণের প্রেক্ষিতে এর স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং যেসব অপরাধী এখনও জীবিত আছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই প্রস্তাব, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা করে। যেখানে স্বীকার করা হয় যে বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা। যা এই ধরনের নৃশংসতার শিকারদের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে এবং তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।

প্রস্তাবটি স্বীকার করে যে সমগ্র জাতিগত গোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তাদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এই অঞ্চলে বসবাসকারী সকল মানুষের অধিকারের সুবিধা ভোগ করার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করবে। যার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ উপভোগ করা যাবে।