চা-শ্রমিক সন্তানদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকঃ "ওরা (শিক্ষার্থীরা) রীতিমত খাইতেই ফারে না"

Your browser doesn’t support HTML5

দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে সিলেট অঞ্চলের চা-শ্রমিকেরা যে মজুরি পাচ্ছেন, তা দিয়ে টানাটানির সংসারে তারা অনেকেই তাদের সন্তানদের ঠিকমতো স্কুলে পাঠাতে পারেন না। হবিগঞ্জের চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা: শামছুন্নাহার বেগম তার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, অর্ধাহারে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বেশিরভাগই শুধু চা খেয়ে স্কুলে আসে।

শামছুন্নাহার জানিয়েছেন, তার স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থীই চা-শ্রমিকদের সন্তান। গত কয়েক বছরে তিনি দেখেছেন মাত্র কয়েক শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করতে সক্ষম হয়েছে। বাকিদের কাজের ঠিকানা হয়েছে চা-বাগান।

দুই যুগের বেশি সময়ে তিনি এমন ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন, যারা লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করতে পেরেছে।

চা-শ্রমিকেরা সম্প্রতি মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে সিলেটের হবিগঞ্জের চান্দপুর এলাকার চা-বাগানে যান ভয়েস অফ আমেরিকার অমৃত মলঙ্গী। সেখানে গিয়ে তাদের যাপিত জীবনের নানা দিক সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি।

শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছিলেন। মালিকপক্ষ প্রথমে ১৪৫ টাকার প্রস্তাব দেয়। শ্রমিকেরা তাতে রাজি না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক শেষে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা করার ঘোষণা এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা।

মালিকেরা প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দাবি করেছেন, দৈনিক মজুরির পাশাপাশি শ্রমিকদের বাড়ি এবং সন্তানদের শিক্ষার সুযোগসহ বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকেন। এই সুযোগ-সুবিধা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।

কিন্তু শ্রমিকেরা ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে অভিযোগ করেছেন, এর আগে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তার কিছুই তারা পাননি। আর তাই খাবারের অভাবে অধিকাংশ দিন শুধুমাত্র চা খাইয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হন।