আলেম, প্রবীণসহ কেবল পুরুষদের নিয়ে আফগান ঐক্যের সভা আহ্বান করেছে তালিবান

(ফাইল) মস্কোতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে তালিবানের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী আব্দুল সালাম হানাফি। ২০শে অক্টোবর, ২০২১।

আফগানিস্তানের ইসলামপন্থী তালিবান বৃহস্পতিবার কাবুলে একটি বৈঠকের জন্য সারা দেশ থেকে প্রায় ৩,০০০ ধর্মীয় আলেম এবং আদিবাসী প্রবীণদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ওই বৈঠকে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।

আফগানিস্তানের রাজধানীতে শুধুমাত্র পুরুষদের নিয়ে আয়োজিত অধিবেশনটি এই ধরনের প্রথম ঘটনা এবং এটিকে বিদ্রোহী থেকে পরিণত-শাসক গোষ্ঠীর জন্য অভ্যন্তরীণ বৈধতা প্রচারের একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে, যাতে করে তারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে পারে।

প্রায় ২০ বছরের সামরিক হস্তক্ষেপের পর গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো মিত্ররা দেশটি থেকে তাদের সৈন্য চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার করে নিলে, তালিবান আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত আফগান সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়।

তালিবানের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুল সালাম হানাফি বুধবার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক, জাতীয় ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরাও ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, একটি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির পাশাপাশি আফগানিস্তান যে সব সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন সেগুলি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

হানাফি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরটিএ-কে বলেছেন, "এটি আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।"

বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে কোনও নারী প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "নারীরা আমাদের মা, বোন। আমরা তাদের অনেক সম্মান করি। যখন তাদের ছেলেরা সমাবেশে থাকে, তার মানে তারাও একইসাথে, সমাবেশে উপস্থিত থাকে।"

প্রধানত নারী ও মেয়েদের প্রতি তাদের কঠোর আচরণের কারণে, কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তালিবানকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ইসলামপন্থী শাসকরা বেশিরভাগ কিশোরীর জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা স্থগিত করেছে, নারীদের জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে এবং ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৭০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতেও তাদের বাধা দিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য তালিবানকে দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে শাসন কায়েম করতে এবং সমস্ত আফগান গোষ্ঠীকে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

দেশটির আনুমানিক ৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারীদের অনুপস্থিতিতে সমালোচকরা বৃহস্পতিবারের মহাসভার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আফগানিস্তানের সাবেক সরকারী কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার তোরেক ফারহাদি বলেন, "একটি বৈঠকে তালিবান দ্বারা নির্বাচিত ৩,০০০ জন অতিথির আনুগত্য দেশের কোনো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে না, কিংবা তালিবানকে কোনো অভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক বৈধতাও প্রদান করবে না"

তালিবানের অধিগ্রহণ এবং পরবর্তীতে একটি সর্ব-পুরুষের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ফলে ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য-নির্ভর আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তা বন্ধ এবং বৈদেশিক সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। এসব সম্পদের মূল্য ৯০০ কোটি ডলারেরও বেশি, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে – এছাড়া আফগান ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন তালিবান নেতাদের উপর নেয়া এই পদক্ষেপ এবং দীর্ঘকাল ধরে চলমান সন্ত্রাস-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞাগুলি নগদ অর্থ সংকটে পড়া দেশটিকে একটি গুরুতর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। পাশাপাশি, বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ এবং ক্রমাগত খরার ফলে ইতোমধ্যেই একটি খারাপ মানবিক সংকটকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃহত্তর বিশ্ব কট্টরপন্থী গোষ্ঠীকে নারীদের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে, যদি বিশ্ব সম্প্রদায় তালিবানের কূটনৈতিক স্বীকৃতির দাবি বিবেচনা রতে চায়।

তবে, তালিবান নেতারা নারীদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। বরং তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, তারা আফগান সংস্কৃতি এবং শরীয়াহ বা ইসলামিক আইন অনুসারে চলবে।