বাংলাদেশের সিলেট জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বরং ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
টানা ৮ দিন ধরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার গ্রাম। এতে, হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ঘরে মজুত করা খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গত মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানিেআরো বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার (২০ মে) ভোর থেকে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন।
জেলার অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে থাকছেন।
সিলেট নগরের বন্যাক্রান্তরাও খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া অনেকে বলছেন, তারা প্রয়োজনীয় খাবার সহায়তা পাচ্ছেননা। খাবার সংকটে তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ বরাদ্দ একেবারেই কম। এ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। একইসাথে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছেননা তারা। বৃষ্টির পানি জমিয়ে চাহিদা মেটাচ্ছেন অনেকে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, “রবিবার (২২ মে) পর্যন্ত সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। রবিবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে পরের দিন সোম ও মঙ্গলবার আকাশ পরিষ্কার হবে। এরপর ফের বৃষ্টিপাত হতে পারে।”
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বুধবার (১৮ মে) কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার এক দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বেলা তিনটায় ওই পয়েন্টে পানি ছিল ১৩ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ছিল ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি বুধবার (১৮ মে) বেলা তিনটা পর্যন্ত বিপদসীমার এক দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বেলা তিনটা পর্যন্ত পানি ছিল ১৭ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। শেওলা পয়েন্টে ছিল ১৩ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। সেখানে বিপদসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার।
সারি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও, কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বেলা তিনটা পর্যন্ত নদীতে পানি ছিল ১১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। ওই নদীর বিপদসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।
জানা গেছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ৮ দিনে ২ হাজার ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখান থেকে নেমে আসা ঢলেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
সিলেট নগরের সুরমা নদীসংলগ্ন কালীঘাটের খেয়াঘাট এলাকার তিন শতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।
ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, “পানি ঠেকাতে দিনরাত কষ্ট করছি। এরপরও ঠেকাতে পারছি না। বেচা-কেনার কথা বাদ দিলাম। এখন দোকানে থাকা মালগুলো রক্ষা করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।”
সিলেটে ঢলের পানিতে আগেই বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছিল। এবার আউশেও আঘাত হানলো বন্যা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাব মতে, চলমান বন্যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানিতে তলিয়েছে-আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির এক হাজার ৪ হেক্টর জমি।
শুক্রবার সকাল ১১টায়ও সিলেট নগরীতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।