জেরুজালেম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধান বলেছেন, ইসরাইলের কর্মকাণ্ড তাদের নিজেদের ধ্বংসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ সমাবেশে ইরান তাদের নিজেদের দেশে তৈরি নতুন খেইবার বাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, কুদস (জেরুজালেমের আরবি নাম) দিবস উপলক্ষে সারা দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত এই সমাবেশে লাখ লাখ ইরানি যোগদান করেন।
এ সময় সারাদেশে লোকজন দলবেঁধে “আমেরিকা মুর্দাবাদ, ইসরাইল মুর্দাবাদ” বলে স্লোগান তোলে এবং ইসরাইলি পতাকায় আগুন দেয়।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বলেন, ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ এবং হামলা থেকে বোঝা যায় যে, ইসরাইলের সঙ্গে আরব কর্তৃপক্ষের আপস ফিলিস্তিনিরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তেহরান অস্বীকৃতি জানালেও ইসরাইলের বিরোধিতা করা ইরানের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যা ইসরাইলের সঙ্গে আপস বিরোধী ফিলিস্তিনি এবং লেবাননের ইসলামপন্থী জঙ্গি দলকে সমর্থন করে।
ফিলিস্তিনি ও অন্য আরবদের উদ্দেশে আরবি ভাষায় খামেনি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনে যা ঘটেছে তা ইহুদিবাদী শত্রুর (ইসরাইল) সঙ্গে সমঝোতার সমস্ত পরিকল্পনা অকার্যকর করে দিয়েছে। কারণ, ফিলিস্তিনের মালিক তথা ফিলিস্তিনিদের মতামতের বিপরীতে বা অনুপস্থিতিতে ফিলিস্তিনের জন্য কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না”।
পূর্ববর্তী সকল শান্তি চুক্তি ... যেমন ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিরোধের সমাধানের জন্য দুই-রাষ্ট্র মীমাংসা (টু-স্টেট সলিউশন) এবং শতাব্দির সেরা চুক্তি হিসেবে অভিহিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে “শূন্য ও অকার্যকর” বলে আখ্যায়িত করেন খামেনি।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, ইরানের সামরিক অধিনায়ক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সমাবেশে যোগ দেন। দুই বছর আগে করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর প্রথমবারের মতো মানুষকে রাস্তায় মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়।
যেসব ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায় তাদের সমর্থনে ইরানে জেরুজালেম দিবস পালিত হয়। প্রতি বছর মুসলমানদের রোজার মাসের শেষ শুক্রবার এই দিবস পালন করা হয়।
রেভল্যুশনারি গার্ডসের অধিনায়ক তেহরানে বিক্ষোভকারীদের সম্মুখে ইসরাইলকে উদ্দেশ করে বলেন, “তোমাদের এই পাপাচার বন্ধ কর। তোমরা ভালো করেই জান যে, আমরা বসে থাকব না, এসবের জবাব দেব”।
“আমাদের জবাব মর্মান্তিক হবে। তোমরা নিজেদের ধ্বংসের পরিস্থিতি তৈরি করছ। আমরা তোমাদের ছেড়ে দেব না… এসব খারাপ কাজ করলে তোমাদের কী দুর্দশা হবে তা আমার থেকে তোমরা ভালো করে জানো”।
ইরানের সামরিক বাহিনী ইসরাইলের যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ফলে প্রায়ই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের সূত্রপাত হচ্ছে। তেহরানের দাবি, শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি।
ইরানের পরমাণু তৎপরতা রোধে তেহরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি অনেক দিন ধরেই দিয়ে আসছে ইসরাইল। যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ইসলামি প্রজাতন্ত্র অস্বীকার করে। ইরান বলেছে, তাদের পরমাণু কার্যক্রমের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।
ফেব্রুয়ারিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার (৯০০ মাইল) ক্ষমতাসম্পন্ন “খেইবার বাস্টার” ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমগুলোর একটির অধিকারী ইরান দাবি করে, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা ২ হাজার কিলোমিটার (১২০০ মাইল) পর্যন্ত। যা এই অঞ্চলে তাদের চিরশত্রু ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।
খেইবার আরব উপদ্বীপের হিজাজ অঞ্চলের একটি প্রাচীন ইহুদি মরূদ্যান, যেটি সপ্তম শতাব্দীতে মুসলিম যোদ্ধাদের হাতে পরাভূত হয়েছিল।
তেহরান তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং অন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচনা করে। পশ্চিমারা এই কর্মসূচি বন্ধের দাবি করলেও তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করে।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি আবার সক্রিয় করতে গত এক বছরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েনায় অনিয়মিতভাবে পরোক্ষ আলোচনা চালাচ্ছে। চুক্তিটি থেকে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন এবং ইরান সেই সুযোগে ২০১৯ সালে চুক্তি লঙ্ঘন শুরু করে।
২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে ইরান তাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা হ্রাস করার বিনিময়ে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল।
মার্চ মাসে তারা আবার চুক্তিটি প্রায় কার্যকর করে ফেলেছিল। শেষ মুহূর্তে রুশ দাবিতে এবং ওয়াশিংটন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেবে কি না সে প্রশ্ন ওঠায় আলোচনা আবার স্থগিত হয়।