বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক পুণঃপ্রতিষ্ঠায় রিয়াদ সফরে এরদোয়ান

সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েব এরদোয়ান মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সালের সাথে হেঁটে যাচ্ছন। ২৮শে এপ্রিল, ২০২২

আঙ্কারা ও রিয়াদের মধ্যে পুরনো উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েব এরদোয়ান বৃহস্পতিবার দুই দিনের সফরে সৌদি আরব যাচ্ছেন।

দেশ দু’টির মধ্যে কয়েক বছর ধরে চলে আসা বৈরিতার পর সৌদি বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে তুর্কি নেতার এ সফর।তবে এ দু’টি দেশের মধ্যে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

মেহমেত ওগুচু লন্ডন এনার্জি ক্লাবের প্রধান। এনার্জি ক্লাব সরকার ও জ্বালানি শক্তি সেক্টরের নেতাদের একটি গ্রুপ। ওগুচু বলেছেন যে এই সফরটি নিবিড় আন্তর্জাতিক কূটনীতির চূড়ান্ত পরিণতি।

ওগুচু বলেন, “প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে বাদশাহর সুসম্পর্ক রয়েছে; তবে যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে, আমাদের গুরুতর অসুবিধা ছিল। এখন মনে হচ্ছে আমি বিশ্বাস করি ব্রিটেন এবং আমেরিকানরা এবং কাতারিরা অবশ্যই কিছু ভূমিকা পালন করেছিল, এমনকি আজেরিরাও এটি করতে পারে। বিষয়গুলি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কিছুটা শিথিল হচ্ছে, এবং এখন রাষ্ট্রপতি পর্যায়ে এটি নিশ্চিত করা হবে।"

এরদোয়ান এবং যুবরাজ তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভিতরে নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যার ঘটনায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক নিন্দার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডটি ক্রাউন যুবরাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এই মাসের শুরুতে খাশোগজি হত্যার বিচার ইস্তাম্বুল থেকে রিয়াদে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে আঙ্কারার সদিচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার ফলে এরদোয়ানের সফরের পথ খুলে গেছে।

ওগুচু বলেছেন, আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে এরদোয়ান তুরস্কের দূর্বল অর্থনীতিকে বাঁচাতে সৌদি সাহায্যের দিকে চেয়ে আছেন।

ওগুচু বলেন, "তুরস্কের রিয়াদের সাথে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার আগ্রহ রয়েছে কারণ তুরস্কের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তুরস্কের অর্থনীতি কোন উল্লেখযোগ্য পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল তুরস্কে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করছে না। তবে এটি এই দেশগুলির সাথে সম্পৃক্ত একটি দেওয়া- নেওয়ার প্যাকেজ চুক্তি হবে। সুতরাং, এখানে প্রকৃত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার স্বার্থ জড়িত।”

ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সোলি ওজেল বলেছেন, এই অঞ্চলে ইরানের পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগ রয়েছে। যা কিনা রিয়াদ এবং আঙ্কারার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন ভিত্তি রচনা করে। বিশেষত যখন মনে করা হচ্ছে যে আমেরিকা্র মনোযোগ মধ্যপ্রাচ্য থেকে দূরে সরে চীনের দিকে যাচ্ছে।

ওজেল বলেন, “তুরস্ক নিজেকে ইরানের বিরুদ্ধে ভারসাম্য হিসাবে উপস্থাপন করছে। সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলির মত উভয় দেশেরই আগ্রহ রয়েছে যে ইরান এই অঞ্চলে যেন আজকের মতো প্রভাবশালী হয়ে না উঠে। এবং ইরানীরাও ক্রমাগত সংকেত পাঠাচ্ছে যে তারা অন্যদের তাদেরকে ইরাক, লেবানন এবং সিরিয়া ‘র মতো দেশগুলি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে দিবে না কারণ এ সব দেশে তাদের বেশ প্রভাব রয়েছে।"

এরদোয়ানের সৌদি সফর একটি বিস্তৃত নীতির অংশ যার ফলে সে অঞ্চল জুড়ে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা যায় যাতে তাদের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন এবং এই মাসের শুরুতে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

তবে বিশ্লেষক ওজেল সতর্ক করেছেন আঙ্কারা একটি দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।