হংকংয়ের বিদেশি সংবাদদাতা সমিতির (ফরেন করেসপনডেন্টস ক্লাব—এফসিসি) সভাপতি সোমবার (২৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেন, যেন "অনিচ্ছাকৃতভাবে" কোনো আইন লঙ্ঘন না হয় সে জন্য তাদের বার্ষিক মানবাধিকার পুরস্কার স্থগিত করা হয়েছে।
২০২০ সালে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের পর ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রচলিত এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার বাতিলকরণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নতুন একটি আঘাত। এই পদক্ষেপ প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ে চীনের অন্য অঞ্চলের মতো শাসনব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এফসিসির সভাপতি সাবেক ওয়াশিংটন পোস্ট সাংবাদিক ও হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমান প্রধান কিথ রিচবার্গ বিবৃতিতে পুরস্কার স্থগিত হওয়ার ব্যাপারে বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো আইন লঙ্ঘন করতে চাই না”।
রয়টার্সের দেখা সমিতির বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী রিচবার্গ সমিতির গণমাধ্যম স্বাধীনতা কমিটিকে এ সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, আইনি ঝুঁকি থেকে কর্মী ও সদস্যদের রক্ষা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে স্ট্যান্ড নিউজের জন্য প্রস্তাবিত পুরস্কার থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ উল্লেখ করা হয়। স্ট্যান্ড নিউজ গত ডিসেম্বরে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া একটি অসাম্প্রদায়িক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। স্ট্যান্ড নিউজের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সম্পাদককে রাষ্ট্রদ্রোহী সংবাদ প্রকাশের সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্ট্যান্ড নিউজকে চারটি পুরস্কার ও পাঁচটি মেরিটস প্রদান করায় সমিতি, কর্মী, সদস্য এবং বিচারকদের আইনি ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলেই এইচআরপিএ (হিউম্যান রাইটস প্রেস অ্যাওয়ার্ডস) স্থগিত করা হয়েছে বলে কিথ ইমেইলে ব্যাখ্যা করেন।
“কিথ আরও বলেন, হংকংয়ের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং টিকে থাকতে হলে এফসিসিকেও পরিবর্তন আনতে হবে”।
রয়টার্স ব্রেকিংভিউস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ব্লুমবার্গ এবং অন্য স্বনামধন্য সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত এফসিসি বোর্ড থেকে শনিবার এ পুরষ্কার স্থগিত ঘোষণা করা হয়। যদিও ইতোমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।
প্রেস ফ্রিডম কমিটির তিন সদস্য—শিবানি মাহতানি, টিমোথি ম্যাকলাফলিন ও মেরি হুই—পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টুইট করেছেন।
মাহতানি লিখেছেন, “আমি শুধুই তীব্র অনুশোচনা অনুভব করছি এবং এই সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করি না”। তিনি এই পুরস্কারের বিচারকও ছিলেন। কার্যবিবরণী অনুসারে কমিটির আরও পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনা শাসনের কাছে হস্তান্তরের সময় প্রণীত “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” চুক্তির অধীনে হংকংকে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ স্বায়ত্তশাসন এবং সর্বোচ্চ স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যার নজির চীনের মূলভূখন্ডেও নেই।
সমর্থক মহল ও কিছু পশ্চিমা সরকারের ভাষ্য, জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে নীতিমালাগুলোকে তীব্রতর করে সুশীল সমাজের জোট ভেঙে দেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার অথবা নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, গণমাধ্যম সংস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসবের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ সেই প্রতিশ্রুত স্বাধীনতাকে পদদলিত করছে।
এই মাসের শুরুতে কথিত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রবীণ সাংবাদিক ও স্ট্যান্ড নিউজের প্রাক্তন লেখক অ্যালান আউকে গ্রেপ্তার করে হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা পুলিশ।
হংকং কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যে, তারা স্বাধীনতায় ওপর হস্তক্ষেপ করছে।