সাংহাই জানিয়েছে, রবিবার (২৪ এপ্রিল) কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। লকডাউন চলাকালে সাংহাইয়ে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি “ভয়াবহ” বলে সতর্ক করেছে চীনের রাজধানী বেইজিং।
কঠোর লকডাউন ও গণপরীক্ষা কৌশল অবলম্বন করেও দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ প্রকোপ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির। শূন্য-কোভিড নীতিতে অনড় থাকায় দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনসাধারণের মনোবলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এ মাসের শুরু থেকেই সাংহাইয়ের বহুজাতিক ব্যবসাকেন্দ্র (কসমোপলিটান বিজনেস হাব) প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠায় সাংহাইয়ে বসবাসরতদের আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘরে আটকে থাকতে হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সরবরাহ চেইন।
চীনের বৃহত্তম এই শহরে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দৈনিক হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হলেও নতুন এই প্রাদুর্ভাব থেকে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা আসে ১৮ এপ্রিল।
রবিবার ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে চীন। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুসারে, দেশটির নতুন মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৭। নতুন স্থানীয় সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ২২ হাজার।
সাংহাইয়ে লকডাউন চলাকালে ঠিক এক দিন আগে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের।
শহরটিতে লকডাউনে বন্দী ২ কোটি ৫০ লাখ (২৫ মিলিয়ন) নাগরিকের জন্য তাজা খাবার সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ পরীক্ষা ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত থাকায় সাধারণ রোগীরা সঠিকভাবে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।
সাংহাইয়ে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে নিহতদের গড় বয়স ৮১ হওয়ায় বয়স্করা এবং টিকা না নেওয়া মানুষ সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ৫ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যদিও যারা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত এবং গুরুতরভাবে অসুস্থ তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
চীনের নিজেদের উৎপাদিত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশ থেকে কোনো টিকা আমদানি করেনি বেইজিং।
খাবার ও মৌলিক সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি সম্পর্কিত ভাইরাল ভিডিওসহ সাংহাইয়ে দীর্ঘায়িত লকডাউনের বিরুদ্ধে অনলাইনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রুখতে সেন্সর কাজ করছে।
শনিবার সন্ধ্যায় একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আতঙ্ক ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ভবনগুলো থেকে বাইরে বের হওয়ার ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার বেইজিংয়ে আরও ২২ জন সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। রাজধানী শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি আবাসিক এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি “ভয়াবহ এবং জটিল” বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্যাং শিংহুয়ো বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কোভিড-১৯ এক সপ্তাহ ধরে শহরে “অদৃশ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ছে”। এতে প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
প্যাং আরও বলেন, বেইজিংয়ে আক্রান্তদের এক চতুর্থাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং সংক্রমিত বয়স্কদের অর্ধেক কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেননি।
জনবহুল পূর্বাঞ্চলীয় চাওইয়াং জেলায় কোভিড পরীক্ষা বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য সশরীরে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম বা ক্রীড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাজধানীর অনেক ফিটনেস স্টুডিও ও শরীর চর্চাকেন্দ্র ইতিমধ্যে কার্যক্রম বাতিল বা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বেইজিং শহরে প্রবেশের ক্ষেত্রেও কঠোর নীতিমালা আরোপ করা হয়েছে। বেইজিংয়ে প্রবেশ করতে হলে ভ্রমণকারীদের ৪৮ ঘন্টা আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে হবে।
যেখানে গত দুই সপ্তাহে অন্তত একটি কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এমন শহর বা দেশে ভ্রমণ করে থাকলে সেসব ব্যক্তিদের শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।