বিক্ষোভের চাপের মুখে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলছেন অনুগতরাও

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা একটি সমাবেশে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। ২৩ এপ্রিল, ২০২২।

কলম্বো — শনিবার, শ্রীলঙ্কার বিপর্যস্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর তার পদত্যাগের চাপ আরো জোরদার হয়েছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের প্রতি, তাঁর কট্টর মিত্ররাও সমর্থন জানালে তাঁর উপর এই বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যম বিষয়ক মন্ত্রী নালাকা গোদাহেওয়া, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভরত হাজার হাজার মানুষের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। হাজার হাজার মানুষ, রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে, শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে । কয়েক মাস ধরে দেশটিতে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট,এবং খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র ঘাটতিসহ নানা ধরণের সংকট দেখা দিয়েছে।

এই সংকট দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ মানুষ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজাপাকসের দপ্তরের বাইরে অবস্থান নিয়েছে।

চাপের মুখে, প্রেসিডেন্ট, তার দুই ভাই - চামাল ও বাসিল এবং ভাতিজা নামালকে এই মাসে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে লোক দেখানো বলে প্রত্যাখ্যান করে।

রাজাপাকসের কট্টর অনুগত, গোদাহেওয়া বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত তার বড় ভাই এবং পরিবারের রাজনৈতিক প্রধান, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা এবং একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণের পথ সুগম করে দেওয়া।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার, পুলিশ, এক বিক্ষোভকারীকে হত্যা করার পর সরকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। গোদাহেওয়া বলেন যে, তিনি তার পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি।

গোদাহেওয়া তার ফেইসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলেছেন,“চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট সফলভাবে সামাল দিতে, সবার আগে আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা”।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা উচিত এবং এমন একটি অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠন করা উচিত, যা সকলের আস্থা অর্জন করতে পারবে”।

এছাড়া, দেশটির সাবেক গণমাধ্যম মন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র দুল্লাস আলাহাপেরুমাসহ ক্ষমতাসীন দলের আরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্য প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বরং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা এখনও তাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।

মাহিন্দা, নেথ এফএম রেডিওকে বলেন, “গুটি কয়েক সাংসদ আমাকে সরে যেতে বলছেন। অধিকাংশই আমাকে চান”।

ঐকমত্যের মন্ত্রিসভার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, ৭৬ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “জনগণকে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে”।

তিনি আরও বলেন, “আমাকে প্রধানমন্ত্রী না রেখে, কোনো অন্তর্বর্তী সরকার হতে পারে না”।