ইয়েমেনে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি সাহায্য সংস্থাগুলোকে দেশটির ক্ষুধার্ত লক্ষাধিক মানুষের জন্য সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ দিলেও আবারও যুদ্ধ শুরু হলে বা মানবিক তহবিল বাড়ানো না হলে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের ইয়েমেনবিষয়ক পরিচালক ইরিন হাচিনসন বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির প্রথম সপ্তাহেই প্রাপ্ত সুবিধাগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ”।
সংস্থাটি হাজ্জাহ প্রদেশের একটি জেলায় ১২ হাজার জনকে সহায়তা প্রদানে সক্ষম হয়েছে। যা তিন বছরের বেশি সময় আটকে ছিল।
ইয়েমেনে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং খাদ্যের দাম বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিশ্বব্যাপী শস্য ও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে এই অবস্থার ওপর আরও চাপ বেড়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) রিচার্ড রাগান বলেন, “ইয়েমেনের কয়েক মিলিয়ন মানুষ হতদরিদ্র অবস্থায় রয়েছে”। ডব্লিউএফপি ইয়েমেনের ৩০ মিলিয়ন লোকের জন্য খাদ্য সংস্থান করছে।
মারাত্মক অপুষ্টিতে নিস্তেজ ও দুর্বল, এক বছর বয়সী জিয়াদ জালালের ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে এবং মাথার খুলি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেটের চামড়া কুঁচকে গেছে।
ইয়েমেনের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল হাজ্জার খাদিশের একটি অস্থায়ী উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাসকারী জালাল পাঁচ বছরের কম বয়সী ২২ লাখ শিশুর মধ্যে একজন। এসব শিশুদের মধ্যে ৫ লাখ ৩৮ হাজার গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে। জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে, প্রাক যুদ্ধবিরতির পর এসব শিশুরা এ বছর তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে৷
এ বছর খাদ্যসংকট ও অপুষ্টি আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে, জাতিসংঘ মার্চের তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি অনুমান করেছে যে, জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যারা ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করতে অক্ষম তাদের সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখ (১৯ মিলিয়ন) ছাড়িয়ে যাবে, যা বর্তমানের ১ কোটি ৭৪ লাথ (১৭.৪ মিলিয়ন) থেকে বেশি।
“আমি খাই না বললেই চলে”
ইয়েমেনের পূর্বদিকে আল-মাহরায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের একটি উদ্বাস্তু শিবিরের নারীরা আটার বল সেঁকার জন্য শিবিরের বাইরে আগুন জ্বালাচ্ছিলেন। শিশুরা মাটির উনুনে তৈরি আটার বল বা চাপটি রুটি খায়।
দুধ নেই বলে চার সন্তানের মা সেহাম আবদেলহাকিম তার ছোট বাচ্চাদের চিনি ও পানি খাওয়ান।
“আমি যখন গর্ভবতী ছিলাম, আমি শুধু চা ও রুটি খেতাম। ... জন্মদানের পরও একই জিনিস; মুরগির মাংস বা কিছু নেই। আমি প্রার্থনা করতাম যেন আমার বাচ্চাটিকে কোলে নিতে পারি”, ৩৬ বছর বয়সী আবদেলহাকিম বলেন।
জাতিসংঘের ইয়েমেনের দূত হ্যান্স গ্রুন্ডবার্গ এই সপ্তাহে বলেছেন যে, রমজানের শুরুতে ২ এপ্রিল শুরু হওয়া দুই মাসের যুদ্ধবিরতি “সহিংসতা এবং বেসামরিক হতাহতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস” করেছে।
ইয়েমেনের বিমান সংস্থা এই সপ্তাহে বলেছে যে, তারা রবিবার থেকে সানা এবং জর্ডানের আম্মানের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করবে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনের সরকারের সমর্থনে এবং হুথিদের বিরুদ্ধে একটি হামলা শুরু করে। এই সামরিক জোট ইয়েমেনের সমুদ্র ও আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইয়েমেনের অর্থনীতি পুনর্গঠন না করা গেলে, দেশটির অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হবে।
কিন্তু জাতিসংঘ ২০২২ সালের জন্য মার্চ মাসে মাত্র ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলার অনুদান পেয়েছে, যা পরিকল্পিত ৪২৭ কোটি (৪.২৭ বিলিয়ন) ডলার থেকে অনেক কম। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইইউ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তহবিল প্রাপ্তির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
তহবিল স্বল্পতার কারণে ডব্লিউএফপি জানুয়ারি থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ (১৩ মিলিয়ন) মানুষের মধ্যে ৮০ লাখের (৮ মিলিয়ন) জন্য মাসিক রেশন কমিয়েছে।