সলোমনে চীনের স্থায়ী সামরিক উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও সতর্কবার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ইন্দো-প্যাসিফিক সমন্বয়ক কার্ট ক্যাম্পবেল সলোমন দ্বীপপুঞ্জের হোনিয়ারা পৌঁছেছেন। ২২ এপ্রিল ২০২২। তার প্রতিনিধিদল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, চীন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সলোমন দ্বীপপুঞ্জের নেতার সঙ্গে দেখা করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, ওয়াশিংটন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটিতে চীনের স্থায়ী সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার যেকোনো পদক্ষেপের বিষয়ে “বিশেষ উদ্বিগ্ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবে”।

হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রধানমন্ত্রী মানসেহ সোগাভারে হোয়াইট হাউজের ইন্দো-প্যাসিফিক সমন্বয়কারী কার্ট ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, নিরাপত্তা চুক্তির অধীনে দ্বীপে চীনের কোনো সামরিক ঘাঁটি, দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি বা শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা থাকবে না।

হোয়াইট হাউজ এই ধরনের ঘটনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবে এর কড়া ভাষা উদ্বেগের মাত্রা নির্দেশ করে, যার সূত্র ধরে এই সপ্তাহে ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটিকে প্রত্যন্ত দ্বীপ দেশটিতে পাঠানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ

বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সলোমনের জনগণের কল্যাণে ওয়াশিংটন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের রূপরেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেখানে একটি দূতাবাস খোলার কাজ ত্বরান্বিত করা, অবিস্ফোরিত অস্ত্রের বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য মারসি জাহাজ পাঠানো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ওয়াশিংটন আরও ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে এবং জলবায়ু ও স্বাস্থ্য উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে “পর্যাপ্ত আলোচনা” হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রতিনিধিরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেছে যে সম্ভাব্য আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর চুক্তিটির প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ও অংশীদাররাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে”, বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

“ইতিহাসের সঠিক পক্ষ”

শুক্রবার, সোগাভারে চীনের দেওয়া অ্যাথলেটিক্স ফিল্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত লি মিং-এর সঙ্গে যোগ দেন। চীন ২০২৩ সালের প্যাসিফিক গেমস আয়োজন করতে সলোমন দেশটিকে সাহায্য করতে মোট যে ১২০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রীড়া সুবিধা প্রদান করে, অ্যাথলেটিক্স ফিল্ড তার একটি।

সলোমন ২০১৯ সালে তাইওয়ানের থেকে বেইজিংয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থানান্তর করে এবং সোগাভারে সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, এই সিদ্ধান্তটি “তার দেশকে ইতিহাসের সঠিক পক্ষে নিয়ে গেছে”।

লি নিরাপত্তা চুক্তির পক্ষে বলেন।

“উন্নয়ন ও নিরাপত্তা একটি মুদ্রার দুই পিঠ। নিরাপত্তা ছাড়া দেশগুলো টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উপভোগ করতে পারবে না। এটি গত বছরের দাঙ্গা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়েছিল”, তিনি একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন।

এই নিরাপত্তা চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে ২ হাজার কিলোমিটারেরও (১২০০ মাইল) কম দূরত্বে চীনা সামরিক উপস্থিতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

নিউজিল্যান্ড ও টোঙ্গা বলেছে যে, তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ফোরামের নেতাদের আসন্ন বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করবে। এ ছাড়া জাপান এই মাসে সলোমন দ্বীপপুঞ্জে একজন উপ–পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে কিয়োডো সংবাদ সংস্থা।

যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বাহিনীকে নিরীক্ষণ করার জন্য বা এই অঞ্চলে আরও নৌ–টহল পরিচালনা করার সুযোগগুলোকে ত্বরান্বিত করতে পারে, আরএএনডি কর্পোরেশন থিংক ট্যাঙ্কের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেছেন।