বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার বুড়িচংয়ে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম হত্যার এজাহারভুক্ত প্রধান অভিযুক্ত মো. রাজু শনিবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
র্যাব ১১–এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি দল শনিবার রাত ২টার দিকে আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়ীতে রাজুকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায়।
তিনি বলেন, এলিট ফোর্সের সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় র্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে সেখানে রাজুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ সীমান্তে মাদক কারবারির গুলিতে মহিউদ্দিন সরকার নাঈম নিহত হন। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈমের মা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে রাজুকে প্রধান অভিযুক্ত করে তিনজনের নামে ও অজ্ঞাত আরও ছয়জনকে অভিযুক্ত করে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় ১৫ এপ্রিল চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
র্যাব ও সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।