যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাবেক জিম্মিরা ইসলামিক স্টেটের “বিটল”-এর মুখোশ উন্মোচন করেছেন

ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ায় ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। ফাইল ছবি

প্রাক্তন জিম্মিরা কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার সময় তাদের প্রতি নৃশংস আচরণের বিবরণ দিয়েছেন।

“বিটলস” নামে পরিচিত কুখ্যাত অপহরণ এবং হত্যাকারী সেলের সদস্য হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত এল শাফি এলশেখের বিচারে এখন পর্যন্ত আটজন প্রাক্তন আইএস জিম্মি সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তবে এই মামলায় প্রাক্তন আইএস বন্দীদের কাউকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অভিযুক্ত আটককারীদের আদালতে শনাক্ত করতে বলা হয়নি।

এর কারণ হলো ৩৩ বছর বয়সী এলশেখ এবং অন্য কথিত “বিটলস”—যারা তাদের ব্রিটিশ উচ্চারণের কারণে এই নামে পরিচিত—তাদের পরিচয় গোপন করার জন্য বেশ পরিশ্রম করেছিল।

প্রাক্তন জিম্মিরা বলেছিল যে, তাদের প্রায়শই চোখ বেঁধে রাখা হতো এবং অপহরণকারীরা সবসময় বালাক্লাভাস পরতেন, যাতে শুধুমাত্র চোখের ওপর দুটি ছিদ্র থাকত।

২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আইএসের হাতে বন্দী থাকা ফরাসি আলোকচিত্রী এডুয়ার্ড ইলিয়াস বলেছেন, “তারা সবসময় নিজেদের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করত”।

অপহরণকারীদের একটি “নিয়ম” ছিল যখনই তারা বন্দীদের কক্ষে প্রবেশ করত, “আমাদের হাঁটু গেড়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে বসতে হতো এবং কখনই তাদের মুখের দিকে তাকাতে দেওয়া হয়নি”, বলেছেন ফেদেরিকো মোটকা। তিনি একজন ইতালীয় সাহায্য কর্মী, যিনি ১৪ মাস ধরে বন্দী ছিলেন।

“আমাদের মুখ ঢেকে রাখতে হতো”, ফ্রিদা সাইদ বলেছেন। তিনি একজন প্রাক্তন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) কর্মী। যাকে তিন মাস ধরে বন্দী রাখা হয়েছিল।

নিকোলাস হেনিন, একজন ফরাসি সাংবাদিক, আদালতে বলেন যে, জিম্মিকারীরা স্পষ্টতই বিশ্বাস করত যে, “যতক্ষণ তাদের মুখোশ পরা থাকবে তারা বিচার থেকে বেঁচে যাবে”।

এলশেখ এবং অন্য একজন কথিত “বিটল”, আলেকজান্ডা আমন কোটে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কে পালানোর চেষ্টা করার সময় সিরিয়ার এক কুর্দি মিলিশিয়ার হাতে বন্দী হন।

তাদের ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মি করা নাগরিকদের হত্যার ষড়যন্ত্র ও একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল।

এলশেখের বিরুদ্ধে আমেরিকান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জেমস ফোলি ও স্টিভেন সটলফ এবং সাহায্য কর্মী কায়লা মুলার ও পিটার ক্যাসিগকে হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি প্রায় ২০ জন পশ্চিমা নাগরিককে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে৷

আলেকজান্ডা আমন কোটে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তার বন্দী হওয়ার পর, এলশেখ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং প্রসিকিউটররা জুরির জন্য সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ আদালতে প্রদর্শন করেন।

সাক্ষাৎকারে, এলশেখ জিম্মিদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন, কিন্তু দাবি করেছেন যে, তিনি তাদের কাছে তথ্য চাওয়া ছাড়া আর কিছু করেননি-উদাহরণস্বরূপ ইমেল বা ঠিকানা-যাতে অপহরণকারীরা বন্দীদের পরিবারের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে।

প্রাক্তন জিম্মিরা তাদের সাক্ষ্যতে বলেছেন, মুখ দেখতে না পেলেও তারা সহজেই “বিটলস” সদস্যদের চিনতে পারবেন। কে কীভাবে সেলের দরজায় কড়া নাড়ত তাও জানতেন বন্দীরা।

তাদের স্বতন্ত্র ব্রিটিশ উচ্চারণ ছাড়াও, “বিটলস” দামী পিস্তল এবং ওয়াকিটকিসহ অন্য রক্ষীদের তুলনায় আরও সুসজ্জিত থাকত।

এলশেখের আইনজীবীরা তার আত্মপক্ষ সমর্থনে শনাক্তকরণের জিদে অটল রয়েছেন।

প্রারম্ভিক যুক্তিতে, তারা স্বীকার করেছেন যে, তিনি একজন আইএস জিহাদি, কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন যে, এলশেখ “বিটলস”–এর সদস্য নন এবং এটি “ভুল পরিচয়”–এর ভিত্তিতে একটি মামলা।