তুর্কি সামরিক ডুবুরি দলগুলো এই সপ্তাহে এই নিয়ে ২৬ মার্চ থেকে তুর্কি জলসীমায় তৃতীয় ভাসমান নৌ–মাইন নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করেছে। তবে উপকূলীয় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিস্ফোরকগুলো এখনও ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালির জন্য হুমকিস্বরূপ।
রাশিয়ার এফএসবি গোয়েন্দা সংস্থা ১৯ মার্চ জানায়, ৪২০টি নৌ–মাইন একটি ঝড়ের কবলে পড়ে কৃষ্ণ সাগরে ভেসে গেছে। এফএসবি বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী মাইনগুলো স্থাপন করেছিল। তবে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগটিকে মিথ্যা তথ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কৃষ্ণ সাগরে নৌ-মাইন স্থাপন এবং সেগুলোকে “অনিয়ন্ত্রিত ভাসমান গোলাবারুদ” হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে।
তুর্কি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত স্টাফ কর্নেল বোরা সেরদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, “মাইনগুলো ভেসে যাওয়ার দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে বসফরাস [প্রণালি]তেও এই ঝুঁকি অব্যাহত থাকবে”। “অন্তত কয়েকটি মাইন প্রণালিতে ভেসে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই”।
আঞ্চলিক ঝুঁকি
নেটো সদস্য তুরস্ক বসফরাস প্রণালির কাছে ইস্তাম্বুলের কৃষ্ণ সাগর উপকূলে ২৬ মার্চ প্রথম মাইনটি শনাক্ত করে। দ্বিতীয়টি ২৮ মার্চ বুলগেরিয়ান সীমান্তের কাছে ইগনেদা উপকূলে পাওয়া যায়।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে, তুর্কি আন্ডারওয়াটার ডিফেন্স দল নিরাপদে দুটি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
বসফরাস প্রণালি কৃষ্ণ সাগরকে মারমারা, এজিয়ান ও ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। এটি কৃষ্ণ সাগরের দেশগুলোর জন্য নৌযান চলাচলের একটি প্রধান পথ।
তুরস্ক ছাড়াও, রোমানিয়া ২৮ মার্চ একটি মাইন নিষ্ক্রিয় করে। জেলেরা প্রথমে এটি দেখতে পায় এবং নৌবাহিনীকে জানায়।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) তুরস্ক, বুলগেরিয়া, জর্জিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা তুরস্কের অনুরোধে হুমকি নিয়ে আলোচনার জন্য মিলিত হন।
প্রচার যুদ্ধ
বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে ভেসে আসা মাইন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রচার যুদ্ধের অংশ।
ইস্তাম্বুলভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বসফরাস অবজারভার কনসালটেন্সির প্রধান ইয়োরুক আইসিক বলেছেন, “আমি মনে করি এই ভাসমান মাইনগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য রাশিয়ার প্রচারণার অংশ”।
“রাশিয়া সম্ভবত বুলগেরিয়ার কাছাকাছি কোথাও থেকে বসফরাসের চারপাশে কয়েকটি নৌ–মাইন প্রণালিতে ভেসে আসার জন্য ফেলেছে”, তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন।
আইসিকের মতে, ইউক্রেনে তার ক্রিয়াকলাপ থেকে পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করতে রাশিয়া কাজটি করেছে, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ান বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
অন্য দিকে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, ইউক্রেন রাশিয়ার কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে এবং তুরস্কসহ আরও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যুদ্ধে জড়িত করতে নৌ-মাইন ব্যবহার করতে পারে।
তুর্কি নেভাল একাডেমির প্রাক্তন কমান্ডার তুর্কার এরতুর্ক বলেছেন, মস্কোর যুদ্ধ পরিকল্পনার মধ্যে ওডেসার কাছে একটি উভচর অভিযান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নেটো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিবহনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযোগকারী নেটোর লন্ডনভিত্তিক শিপিং সেন্টার সোমবার প্রকাশ করেছে যে, “অতিরিক্ত ভাসমান মাইনের হুমকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না”।
৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি গোয়েন্দা বার্তাও সতর্ক করেছিল যে, কৃষ্ণ সাগরের মাইনগুলো “সামুদ্রিক কার্যকলাপের জন্য একটি গুরুতর ঝুঁকি”।
মাছ ধরা
২৬ মার্চ তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে।
মৎস্যজীবীরা বলছেন, যেহেতু তারা ভাসমান মাইন নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাই তারা তাদের নৌযানের সামনে একজনকে মাইন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।
“আমরা ভয় পাচ্ছি যে ভাসমান মাইন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে”, রেসেপ কোক, যিনি ইস্তাম্বুলের সারিয়ার জেলায় ৩৮ বছর ধরে জেলে হিসেবে কাজ করেছেন, তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।