যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে ভয়ের সংস্কৃতির বিষয়ে কথা বলার জন্য সফরে যেতে ভারতীয় সাংবাদিককে বাধা

ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক রানা আইয়ুব নয়াদিল্লিতে তার প্রকাশিত বই “গুজরাট ফাইলস”–এর মোড়ক উন্মোচনের সময় বক্তব্য দিচ্ছেন। ২৭ মে ২০১৬। ফাইল ছবি

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানোর বিষয়ে বক্তৃতার দেওয়ার জন্য ভারতের বিশিষ্ট একজন সাংবাদিক ইউরোপ ভ্রমণের জন্য দিল্লি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।

রানা আইয়ুব একজন বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টির হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের তীব্র সমালোচক।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) তাকে মুম্বাই বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টস বা আইসিএফজে আয়োজিত একটি সম্মেলনে ভাষণ দিতে এবং ১ এপ্রিল দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয় সভায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আইয়ুবের লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।

এরপর পেরুগিয়ায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসবে অংশ নিতে তার লন্ডন থেকে রোমে যাওয়ার কথা ছিল, যেখানে মূল বক্তা হিসেবে আইয়ুবের একটি বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। ৪ এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য তার ওই বক্তৃতার শিরোনাম হওয়ার কথা ছিল “যখন রাষ্ট্রই আক্রমণকারী: বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকতা হুমকির সম্মুখীন”।

আইয়ুব লন্ডনে যেতে ব্যর্থ হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে ১ এপ্রিলের কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

আইয়ুবের মতে, আর্থিক অপরাধের তদন্তকারী এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) একটি সমন জারি করে। ইতিমধ্যেই তখন তিনি লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে মুম্বাই বিমানবন্দরে ছিলেন। তার ভ্রমণে বাধাদানকারী এই লুক আউট সার্কুলার (এলওসি) একটি তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধিদপ্তর কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে ত্রাণ কাজের জন্য আইয়ুবের সংগৃহীত অনুদানের অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্তটি পরিচালনা করছে। সাংবাদিক আইয়ুব অভিযোগটি অস্বীকার করেন।

ভারতের বাইরে ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইয়ুব। ইডির বিরোধিতার কারণে আদালত এলওসি বাতিল করতে অস্বীকার করেছে, যার অর্থ তিনি আপাতত বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। আদালত আইয়ুবের বিরুদ্ধে মামলার একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে ইডিকে নির্দেশ দিলে, ৪ এপ্রিল নতুন শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।

৩৭ বছর বয়সী আইয়ুব একজন স্বাধীন সাংবাদিক, যিনি ওয়াশিংটন পোস্টের জন্যও লেখেন। তিনি হিন্দু ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো থেকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে তার বই ‘গুজরাট ফাইলস’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এসব হয়রানির শুরু হয়। বইটিতে, তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, গুজরাটের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের কর্মকর্তারা ২০০০ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস গণহত্যায় জড়িত ছিল।

ইডি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা এবং ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনার পর আইয়ুবের বিরুদ্ধে হয়রানির পরিমাণ বেড়ে যায়।

আইয়ুব তার বিরুদ্ধে ইডির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এই সংস্থার কার্যকলাপকে তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।

দিল্লির আদালতে আইয়ুবের পক্ষের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন যে, সরকারের সমালোচনা করায় তার মক্কেলকে ইডির মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি আইয়ুবের সমর্থনে একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ভারতে মুক্ত সংবাদপত্র আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে, জাতিসংঘের অধিকার বিশেষজ্ঞরা চেয়েছিলেন যে, “তার বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি অবিলম্বে শেষ করা হোক”।

গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীগুলো আইয়ুবের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।

আইসিএফজের গ্লোবাল রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অনলাইন আক্রমণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জুলি পোসেটি বলেছেন যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আইয়ুবের সাংবাদিকতার অনুশীলনকে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।

আইয়ুবের আক্রমণকারীরা তার মুখ বন্ধ করতে এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, পোসেটি উল্লেখ করেছেন।