স্বাধীন বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে ৪ এপ্রিল সোমবার। ১৯৭২ সালের এই দিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পর নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্র। বলা হয়ে থাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এখন বিস্তৃত এবং গভীর। গণতন্ত্র, সর্বজনীন মানবাধিকার, শ্রমমান এবং সুশাসন-এই চার স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি নানা আয়োজনে উদযাপন করা হচ্ছে।
অংশীদারিত্ব উদযাপনের এই স্মরণীয় মুহূর্তে ‘আগামীর পানে আরও ৫০ বছর পথচলার দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তরকে ‘বিস্ময়কর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল দিনগুলো পেরিয়ে স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না! কিন্তু না, সেই অবস্থার বদল তো বটেই সফলতার গল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।
দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত এক বিশেষ লেখায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। উভয় দেশ স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে এবং গণতন্ত্রের প্রতি অগাধ বিশ্বাস দ্বারা ঐক্যবদ্ধ। তারা জানে যে, গণতন্ত্র একটি প্রক্রিয়া এবং এর কোনো চূড়ান্ত রূপ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অকথ্য ও অবর্ণনীয় সহিংসতা ও বর্ণবাদের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমেরিকান জনগণ এই ধরনের সমস্যাগুলো সততার সঙ্গে খোলাখুলিভাবে মোকাবিলা করছে এবং কখনো কখনো তারা মানুষকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে এবং কার্যকর পরিবর্তনের জন্য জোরালো আওয়াজ তোলে। বাংলাদেশেও অনেকেই একই কাজ করছে এবং আমরা তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করি।
তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া একই ধরনের, তারা চায় একটি প্রাণবন্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্র, একটি জবাবদিহিতামূলক বিচার ব্যবস্থা এবং সবার জন্য মৌলিক মানবাধিকার। আমাদের এই অভিন্ন চাওয়া অর্জনে আগামী দশকগুলোতে বাংলাদেশ আমাদের অংশীদারিত্বের ওপর আস্থা রাখতে ও নির্ভর করতে পারে।
দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধুই দ্বিপাক্ষিক নয়। এই সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা ও বিভিন্ন স্তর আছে। আছে কৌশলগত দিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য, শক্তিশালী বন্ধু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বাংলাদেশ একটা নির্ভরযোগ্য বন্ধু।
বঙ্গবন্ধুকে পাঠানো প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চিঠি:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭২ সালের ৪ঠা এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়। সেই চিঠি ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিতে নিক্সন লিখেন-
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনাকে জানাতে চাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দূতাবাস পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। ঐতিহাসিকভাবে দু’দেশের জনগণের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৪৯ সাল থেকে ঢাকায় আমেরিকার মিশন অফিস রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অনেক আমেরিকান, ব্যক্তিগত এবং সরকারি পর্যায়ে রোগবালাই, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগে বাঙালিদের পাশাপাশি থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে সন্তুষ্ট। এই সহযোগিতার ফলে একটি স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমি নিশ্চিত যে আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছা আরও দৃঢ় হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, আপনাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে আমাদের প্রচলিত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমরা সম্পূর্ণরূপে বাঙালি জনগণের অগ্রগতি ও কল্যাণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করি। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উপমহাদেশের জাতিগুলি একসঙ্গে কাজ করুক সেই আশা রাখি।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের সুবর্ণজয়ন্তীর স্মরণীয় দিনে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া সেখানে এ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন তিনি।