রাশিয়ার লক্ষ্য পূর্ব দিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী কিয়েভের উত্তরের এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করছে

কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে বাকাতে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন। ছবিটি ২ এপ্রিল (২০২২) তোলা

রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রথমবারের মতো রাজধানী অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন। তারা শনিবার (২ এপ্রিল) বলেছে যে, তাদের বাহিনী কিয়েভের চারপাশের সব এলাকা পুনর্দখল করেছে।

ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, “পুরো কিয়েভ অঞ্চল হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে”। এই দাবির ব্যাপারে রাশিয়ার কোনো মন্তব্য ছিল না। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সপ্তাহে রাশিয়া এই এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর ইউক্রেনের সেনারা কিয়েভের আশপাশের ৩০টিরও বেশি শহর ও গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে।

পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার সেনারা আবারও সংগঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কিয়েভের আশপাশের শহরগুলো পাঁচ সপ্তাহের লড়াইয়ের ক্ষত বহন করছে। রাস্তায় লাশ পড়ে আছে এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মাইন ফেলে যাওয়ার জন্য অভিযোগ করেছেন।


বাকায় শতাধিক নিহত

পুনরুদ্ধার করা একটি শহরে বাসিন্দারা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন রয়টার্সকে।

বাকার মেয়র আনাতোলি ফেডোরুক বলেছেন, ৩০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বলেছে যে, কিয়েভের পশ্চিমে দিমিত্রিভকা গ্রামে অনুসন্ধানের সময় একদিনে ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। এ কারণে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। রয়টার্স তথ্যটি যাচাই করতে পারেনি।


জেলেন্সকি-পুতিন আলোচনা?

২৪ ফেব্রুয়ারি সেনা পাঠানোর পর, রাশিয়া যেটাকে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য “বিশেষ অভিযান” বলে অভিহিত করেছে, দেশটি ইউক্রেনে কোনো একক প্রধান শহর দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরিবর্তে শহরাঞ্চলে অবরোধ করেছে এবং ইউক্রেনের এক চতুর্থাংশ জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করে ফেলেছে৷

দুই পক্ষই এই সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে ও ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আলোচনাকে “কঠিন” বলে বর্ণনা করেছে। শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “মূল বিষয় হলো যে, আলোচনা চলছে, হয় ইস্তাম্বুলে বা অন্য কোথাও”।

এখনো নতুন কোনো আলোচনার ঘোষণা করা হয়নি। তবে ইউক্রেনের আলোচক ডেভিড আরাখামিয়া শনিবার বলেছেন যে, জেলেন্সকি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার বিষয়টিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।


মারিউপোল থেকে পলায়ন

পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে শুক্রবার একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর রেডক্রসের একটি কনভয় আবারও মারিউপোলের ঘেরাও করা বন্দর থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা রবিবারের আগে বন্দরে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে না।

ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য। মারিউপোলে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়ে আছেন, যারা তীব্র খাদ্য ও পানির সংকটে ভুগছেন।

মারিউপোল থেকে পালিয়ে আসা কিছু বেসামরিক নাগরিক বলেছেন যে, রাশিয়ান সেনারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের খুঁজছে। এ কারণে সেনারা পথিমধ্যে তাদের বারবার থামিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে।


ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-মধ্য নিপ্রো অঞ্চলে, একটি রাশিয়ান রকেট একটি রেললাইনে আঘাত করেছে, যাতে রেলট্র্যাকগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ট্রেন চলাচল স্থগিত রয়েছে। এর আগে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মধ্য ইউক্রেনের পোলতাভা এবং ক্রেমেনচুক শহরে আঘাত করেছিল। পোলতাভা অঞ্চলের প্রধান দিমিত্রি লুনিন বলেছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে যে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোলতাভা ও ডিনিপ্রোর সামরিক বিমানঘাঁটি নিষ্ক্রিয় করেছে। পরে তারা বলেছে যে, তাদের বাহিনী সারা দেশে ২৮টি ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে, যার মধ্যে দুটি রকেট এবং আর্টিলারি অস্ত্র ও গোলাবারুদের ডিপো রয়েছে।