শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সহিংস বিক্ষোভের পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভের সময় একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিক সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। ৩১ মার্চ ২০২২।

শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সহিংস বিক্ষোভের পর শুক্রবার (১ এপ্রিল) গভীর রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

রাজাপাকসে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন যে, তিনি জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো সংরক্ষণের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে বৃহস্পতিবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে শত শত বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষ হয়।

বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং শুক্রবার কলম্বো ও এর আশেপাশে কারফিউ জারি করেছে। জ্বালানিসহ অন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতির কারণে এই বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।

জ্বালানি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপ দেশটিতে দিনে ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকছে।

কোভিড মহামারির কারণে দেশের লাভজনক পর্যটন শিল্প থেকে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় রাজাপাকসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর ছাড়ের ফলে রাজস্ব আয় আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঋণ কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগে গত মাসে দেশটির মুদ্রার তীব্র অবমূল্যায়ন ঘটে। এর ফলে সাধারণ শ্রীলঙ্কানরা ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েন।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ১১টি রাজনৈতিক দলের একটি জোট রাজাপাকসেকে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার এবং সংকট মোকাবিলায় সব দলের সঙ্গে মিলে একটি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। কৌশলগত কারণে ভারত ও চীন, উভয়ই শ্রীলঙ্কায় প্রভাব বিস্তার করতে প্রতিযোগিতা করছে।

বৃহস্পতিবার রাজাপাকসের বাসভবনের কাছে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। জনতা বেশ কয়েকটি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সংঘর্ষে কমপক্ষে দুই ডজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে তারা বিক্ষোভকারীদের আহতের সংখ্যা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

দেশটিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হানা সিঙ্গার-হামদি সংঘর্ষে জড়িত সকল গোষ্ঠীকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন”, তিনি টুইটারে লিখেছেন।