পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন

পুলিশ কর্মকর্তারা একটি রাস্তা পার হচ্ছেন। পেছনে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভবন দেখা যাচ্ছে। ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, ২৮ মার্চ ২০২২

ইসলামাবাদ—পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দেশটিতে অপশাসনের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে একটি অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া সোমবার (২৮ মার্চ) শুরু করেছে।

বিরোধী দলগুলো সম্মিলিতভাবে সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। ৩৪২ সদস্যের পার্লামেন্ট বৃহস্পতিবার প্রস্তাবের ওপর একটি বিতর্ক শুরু করবে এবং পরবর্তীতে একটি ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরীফ বলেছেন, “এই হাউজের (সংসদ) আস্থা হারিয়ে ফেলায় প্রধানমন্ত্রী তার পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন”।

২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে ইমরান খান জোট সরকার গঠন করেন। ইমরান খান দৃঢ়ভাবে তার বিরুদ্ধে আনা অপশাসনের অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান এবং অনাস্থা ভোটকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার নেতৃত্বের জন্যে এটা সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

৬৯ বছর বয়সী প্রাক্তন এই ক্রিকেট তারকা বলেছেন, তার ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল থেকে সম্প্রতি একাধিক সদস্যের দলত্যাগ সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের তার প্রতি সমর্থন রয়েছে।

কিন্তু বেশ কিছু পিটিআই আইনপ্রণেতা গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটের আগে দল পরিবর্তন করেছেন এবং জোটের অংশীদারেরাও নীতিগত বিরোধের জন্য আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বর্তমান পার্লামেন্টে ইমরান খানের ক্ষমতা ধরে রাখার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ ভোটের কম রয়েছে।

বিরোধী নেতারা এবং স্বাধীন বিশ্লেষকেরা বলেছেন যে, ইমরান খান দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন, যেটি তার নির্বাচনী বিজয়ের সূচনা করেছিল এবং পরে বিরোধীদের তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে উৎসাহিত করেছিল।

যদিও সোমবারের শেষার্ধে সরকার তার প্রধান অংশীদার, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কিউ–এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে এবং তাদের দেশের সবচেয়ে জনবহুল পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ দিতে সম্মত হয়েছে। বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে অনাস্থা ভোটের সমর্থকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে বর্ণনা করেছেন।

বিরোধী দল, যাদের সম্মিলিতভাবে পার্লামেন্টে ১৬৩টি আসন রয়েছে, জানায় যে, তারা এখনো সরকার পতনের জন্য সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে, যদিও অতীতে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীকে এই ধরনের ভোটের মাধ্যমে পদ থেকে অপসারণ করা হয়নি।

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং পাকিস্তানের ক্রমাগত অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যেই এই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকার এর জন্যে তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের ব্যাপক দুর্নীতি এবং গত কয়েক বছরে কোভিড সংক্রমন মোকাবেলায় জারি করা লকডাউনকে দায়ী করেছে।

রবিবার ইমরান খান রাজধানী ইসলামাবাদে তার সমর্থকদের একটি বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে “বিদেশি ষড়যন্ত্র” থেকে উদ্ভূত।

বিশদ বিবরণ না দিয়ে ইমরান খান দাবি করেন, “সরকার পরিবর্তনের প্রয়াসে বিদেশ থেকে পাকিস্তানে তহবিল পাঠানো হচ্ছে। আমাদের নিজেদের লোকদের ব্যবহার করা হচ্ছে”।

সোমবার শরীফ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার দাবির সপক্ষে পার্লামেন্টে প্রমাণ দিতে বলেছেন।

সামরিক বাহিনী, যারা অতীতে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং যা পাকিস্তানকে দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের দিকে পরিচালিত করেছিল, তারা এই রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তান ঐতিহ্যগতভাবে পশ্চিমাদের পাশে রয়েছে এবং পাকিস্তান নেটো সদস্য না হলেও তাদের একটি প্রধান মিত্র।

ইমরান খান সরকার অবশ্য এই মাসের শুরুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে।