ইসলামাবাদ—তালিবান সরকার শীতকালের ছুটির পরে বুধবার (২৩ মার্চ) আফগানিস্তানের স্কুলগুলো আবার খুলে দিয়েছে। কিন্তু সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে। তারা বলেছে যে, এসব শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী আইন বা শরিয়া অনুসারে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে তাদের এখনো সময় প্রয়োজন।
ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি ২৩ মার্চ দেশের সব মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২৩ মার্চ বেশির ভাগ আফগান প্রদেশের জন্য স্কুল শুরুর বাৎসরিক প্রথম দিন। অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ত্বরিত সমালোচনার মুখে পড়েছে তালিবান সরকার।
তালিবান এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “আমরা সমস্ত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং যে সমস্ত স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরে মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে তাদেরকে জানাচ্ছি যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্কুলগুলো বন্ধ থাকবে।
বুধবার তালিবানের পূর্ববর্তী নির্দেশের, যেখানে সবার জন্য স্কুল খোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, শেষ মুহূর্তের সংশোধনীটি শুনে রাজধানী কাবুলে অনেক শিক্ষার্থীকে কাঁদতে দেখা যায়। তারা সকালে বিপুল উত্তেজনায় ক্যাম্পাসে এসেছিল কিন্তু তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলা হয়।
“আমার স্কুল পুনরায় খোলার খবর শুনে গতকাল পর্যন্ত আমি আনন্দে কাঁদছিলাম। কিন্তু আজ আমি কাঁদতে চাই, কারণ আমি আমার স্কুলে ঢুকতে পারিনি”, একজন শিক্ষার্থী কাঁদতে কাঁদতে আফগান টোলো নিউজ চ্যানেলকে বলেন।
কাতারে কর্মরত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ইয়ান ম্যাককারি টুইট করেছেন, “আমি একাধিক প্রতিবেদনে ষষ্ঠ শ্রেণীর ওপরে মেয়েদের তালিবান সরকার স্কুলে ফিরতে দিচ্ছে না দেখে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”।
জাতিসংঘে তালিবানের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত সুহেল শাহীন জোর দিয়ে বলেন যে, মেয়েদের শিক্ষা স্থগিত করা একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ।
কাবুলের শিক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র আজিজ আহমেদ রায়ান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার আদেশটি তালিবান নেতৃত্বের কাছ থেকে এসেছে এবং মন্ত্রক এই আদেশ প্রয়োগ করতে বাধ্য।
সাত মাস আগে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েদের ক্লাসরুমে ফিরতে বাধা দেয়। তালিবান কর্মকর্তারা বারবার কারণ হিসেবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং শরিয়া অনুযায়ী মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে বিশেষ ব্যবস্থার অভাব উল্লেখ করেছেন।
এনআরসি অনুসারে, ৩৪টির মধ্যে ৬টি প্রদেশ ছাড়া, গত আট মাস ধরে আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে।
ইউনিসেফের ধারণা, আফগানিস্তানে শিক্ষা সুবিধার বাইরে রয়েছে চার মিলিয়ন শিশু। এসব শিশুর মধ্যে ৬০ শতাংশ মেয়ে।
বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভবিষ্যৎ তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান এবং আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা ছাড়াও অন্য সহায়তা প্রদানের শর্ত হিসেবে আফগান নারীদের জন্য শিক্ষা এবং কাজের সুবিধা দেওয়ার দাবি রেখেছে। আফগানিস্থানে বর্তমানে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মুখোমুখি।