ইউক্রেনের শরণার্থীদের মানবসম্পদ হিসেবে গ্রহণ করেছে পূর্ব ইওরোপ

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকরা ওয়ারসো যাওয়ার লক্ষ্যে বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছেন পুশেমিশেল রেল স্টেশনে। মার্চ ১২ ২০২২। (ছবি- এএফপি)

পূর্ব ইওরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার আক্রমণ থেকে পালিয়ে আসা লক্ষাধিক ইউক্রেনীয় নাগরিকদের শক্তিশালী শ্রমশক্তি হিসেবে গ্রহণ করছে। তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন যে, তাদের সবাইকে এক সঙ্গে শ্রমবাজারে একীভূত করা কঠিন হবে।

জাতিসংঘের মতে, কমপক্ষে আড়াই মিলিয়ন মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে, যেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইওরোপের দ্রুততম সময়ে সর্বাধিকসংখ্যক শরণার্থী সংকট বলে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।

শরণার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি এখন পোল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তবে কয়েক হাজার মানুষ মল্দোভা এবং বুলগেরিয়াতেও অবস্থান করছেন। এই দেশগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।

“যারা এখন ইওরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে আসছেন তারা বেশ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং এই অঞ্চলের শ্রমের চাহিদা মেটাচ্ছেন”, ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিগলিন্ড রোজেনবার্গার বলেছেন। তিনি যদিও সতর্ক করেন যে, শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর এই মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন রেখেছেন, পূর্ব ইওরোপীয় দেশগুলো, যেগুলোর জিডিপি পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় কম, কীভাবে এই বিশাল শরণার্থীদের ধাক্কা সামলাবে।

শরণার্থীদের চাপ সামলাতে বেশ কিছু দেশ আরও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।

“শিক্ষিত, উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন”

বুলগেরিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি সরকারের কাছে একটি চিঠিতে বলেছে যে, তারা ২ লাখ ইউক্রেনীয়কে নিয়োগ দিতে পারে।

তারা বলেন, যারা বুলগেরিয়ান বংশোদ্ভূত এবং বুলগেরীয় ভাষা জানেন তাদের বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এদিকে, প্রযুক্তি, টেক্সটাইল, নির্মাণ এবং পর্যটন খাতের প্রতিনিধিরাও বলেছেন যে, তারা কয়েক হাজার লোককে নিয়োগ দিতে আগ্রহী।

কমিউনিজমের পতনের সময় বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় নয় মিলিয়ন থেকে কমে এখন সাড়ে ছয় মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এর জন্যে অনেক মানুষের দেশত্যাগও দায়ী।

বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিরিল পেতকভ ইউক্রেনের শরণার্থীদের “বুদ্ধিমান, শিক্ষিত...উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, “এরা ইওরোপীয় বংশোদ্ভূত। তাই আমরা এবং অন্য সব দেশ তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত”, তিনি বলেন।

প্রায় ২০ হাজার ইউক্রেনীয় ইইউর দরিদ্রতম সদস্য বুলগেরিয়াতে রয়েছে, যদিও রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরের ওডেসা দখল করলে তাদের সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতিকে সমর্থনকারী কিন্তু শ্রম-ঘাটতির কারণে ভুক্তভোগী হাঙ্গেরিও ইউক্রেনীয়দের স্বাগত জানিয়েছে।

দেশটির জাতীয়তাবাদী নেতা ভিক্টর অরবান বলেছেন, “আমরা দুটির মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে সক্ষম: কে অভিবাসী, যারা দক্ষিণ থেকে আসছে... এবং কে উদ্বাস্তু।”

তবে ইউক্রেনীয়রা এসব অঞ্চলে থাকবেন কি না সেটা একটি বড় প্রশ্ন, কারণ অনেকেই তাদের আত্মীয়ের কাছে বা ভালো সম্ভাবনা পেলে ইওরোপে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন।

একীভূতকরণে সমস্যা

পোল্যান্ডের মতো যেসব দেশে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী অবস্থান করছে সেখানে অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, কারণ শরণার্থীদের মধ্যে অনেক শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছে, যারা কাজ করতে অক্ষম।

“কীভাবে এই বৃহৎ জনসংখ্যা ইওরোপ জুড়ে একত্রিত হবে? এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে”, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ব্র্যাড ব্লিটজ এএফপিকে বলেছেন।

ইউক্রেন এবং রোমানিয়ার মাঝখানে অবস্থিত ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ মল্দোভা, প্রায় ১ লাখ শরণার্থীদের জন্য জরুরি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইওরোপিয়ান স্ট্যাবিলিটি ইনিশিয়েটিভের জেরাল্ড নাউস বলেছেন, নিজেদের অঞ্চলে কয়েক হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইওরোপীয় ইউনিয়নের এখনই প্রস্তুত হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, সংকটটি “মানবিক কারণে ইওরোপীয়দের একত্রিত করার দুর্লভ মুহুর্তগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হতে পারে”।

ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার রোজেনবার্গার বলেছেন, যেসব সরকারগুলো অভিবাসন সীমিত করতে চেয়েছিল তারা এখন ইউক্রেনের প্রতি জনগণের সহানুভূতির মুখে দ্রুত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।

কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি চিরকাল স্থায়ী নাও হতে পারে যখন “কয়েক মাসের মধ্যে, দরিদ্র এবং কম যোগ্যতাসম্পন্ন শরণার্থীরা প্রবেশ করতে শুরু করবে”, তিনি বলেন।