প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার (১১ মার্চ) ঘোষণা করেছেন, রাশিয়ার জন্য “সবচেয়ে পছন্দের দেশের” (মোস্ট ফেভারড নেশন—এমএফএন) মর্যাদা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করতে চায়। কংগ্রেসে অনুমোদিত হলে, এই পদক্ষেপটি কার্যকরভাবে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করবে এবং বাইডেন প্রশাসন ক্রেমলিনের ওপর ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় নতুন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বৃদ্ধির জন্য জো বাইডেন সাত দেশের জোট জি-৭ এবং ইওরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সমন্বয় করে এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
“পুতিন নির্দয় এই হামলা চালিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্র এবং অংশীদাররা পুতিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে এবং রাশিয়াকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরও বিচ্ছিন্ন করার জন্য একযোগে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে”, বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে মন্তব্য করেন। “পুতিনকে চাপ দিতে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার আগ্রাসনের জন্য তাকে আরও বেশি দায়বদ্ধ রাখতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর রূপরেখা তুলে ধরেন” তিনি।
এমএফএন মর্যাদা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৬৪ সদস্য দ্বারা প্রণীত বৈষম্যহীন নীতির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে সমান আচরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে সবাই কম শুল্ক, কম বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ আমদানি কোটা থেকে উপকৃত হতে পারে।
এমএফএন মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমা মিত্ররা আমদানি শুল্ক বাড়াতে বা রাশিয়ার পণ্যের ওপর কোটা আরোপ করতে বা এমনকি তাদের নিষিদ্ধ করতে, দেশের বাইরে পরিষেবাগুলোকে সীমাবদ্ধ করতে এবং সম্ভাব্য রুশ মেধা সম্পত্তির অধিকার বাতিলের সুযোগ পাবে। এটি কার্যকর করার জন্য তাদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব জাতীয় আইন অনুসারে তা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রেরও কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ক্রিমিয়া দখল করার পর পুতিনকে শাস্তি দিতে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার পর, যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রপ্তানির সিংহভাগই শুধুমাত্র তেল ও গ্যাস। শুক্রবারের ঘোষণার আগে ওয়াশিংটন ইতিমধ্যেই রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে, যার অর্থ হলো এমএফএন প্রত্যাহার কার্যত বাকি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না।
জার্মান মার্শাল ফান্ডের সিনিয়র ফেলো জ্যাকব ফাঙ্ক কিরকেগার্ড ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, এই পদক্ষেপটি বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফোরামে রাশিয়াকে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন করবে। “এটি ‘কেবলমাত্র প্রতীকী’ নয়, তবে এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের তেল নিষেধাজ্ঞা বা আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞার চেয়ে অনেক কম”, তিনি বলেন।
বরং ইওরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার এমএফএন মর্যাদা প্রত্যাহার বেশি প্রভাব ফেলবে কারণ ব্লকটি রাশিয়ার সঙ্গে অনেক বেশি বাণিজ্য করে। কিন্তু ইইউ যেহেতু রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিচ্ছে, কিরকেগার্ড উল্লেখ করেন, শাস্তি দেওয়ার মতো খুব বেশি অ-জ্বালানি খাত বাকি থাকবে না। তিনি বলেন, মস্কোর এমএফএন মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার মানে হলো নন-এমএফএন শুল্ক প্রযোজ্য হবে, যা প্রায়শই এমএফএন শুল্কের পরিমাণ থেকে খুব বেশি আলাদা নয়।
মস্কোর এমএফএন মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র সামুদ্রিক খাবার, ভদকা এবং হীরাসহ রাশিয়ার অর্থনীতির বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য খাত থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের মতো নেতৃস্থানীয় বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান থেকে রাশিয়ার ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা বিলোপেরও চেষ্টা করছে জি-৭।
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা
পশ্চিমা সরকারগুলোর পদক্ষেপের বাইরে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও মস্কোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছে। অংশীদারদের চাপের মুখে স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা এবং নাইকিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠান এবং বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আর্থিক সংস্থা গোল্ডম্যান সাচ রাশিয়ায় তার বিনিয়োগ বন্ধ করে দিচ্ছে এবং শেল, বিপি এবং এক্সন মোবিল করপোরেশনসহ জ্বালানি উৎপাদক সংস্থাগুলো সেখানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম হ্রাস করছে৷
অন্যদিকে দেশ ছেড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে মস্কো। এই সপ্তাহের শুরুতে, পুতিন বলেন যে, তিনি “বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা” চালু করে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আইনি উপায় খুঁজবেন। রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রক বলেছে যে, দেশটি ছেড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থায়ীভাবে কবজা করতে পারে।