রাশিয়া ইউক্রেনের একটি পারমাণবিক স্থাপনা, গোটা ইওরোপের মধ্যে যেটি সর্ববৃহৎ, শুক্রবার (৪ মার্চ) সেটি দখল করার পর ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে।
দূতাবাসের টুইটার অ্যাকাউন্টের বিবৃতিটি ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাপর মন্তব্যগুলোর চেয়ে বেশ কড়া ছিল।
“পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা করা যুদ্ধাপরাধ। ই্রউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রে পুতিনের গোলাবর্ষণ তার সন্ত্রাসের রাজত্বকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে”, কিয়েভ দূতাবাস থেকে এক পোস্টে বলা হয়।
রাশিয়ার আক্রমণকারী বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে জোর লড়াইয়ে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করে নেয়। এতে বিশ্বব্যাপী চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। তবে যে প্রশিক্ষণ ভবনটিতে আগুন লাগে সেটা নিভে গেছে এবং কর্মকর্তারা বলেছেন যে, পারমাণবিক কেন্দ্রটি এখন নিরাপদ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইউক্রেনের নাশকতাকারীদের প্ল্যান্টে আগুন লাগানোর জন্য দায়ী করেছে এবং বলেছে যে, তাদের বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, পররাষ্ট্র দপ্তর ইওরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সকল দূতাবাসকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। সেই বার্তায় তারা কিয়েভ দূতাবাসের টুইটটিকে—যেখানে দূতাবাস হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে—সেটি পুনরায় টুইট না করতে বলেছে। সিএনএন আরও জানায় তারা বার্তাটি পর্যালোচনা করেছে।
কিয়েভ দূতাবাসের টুইট যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সামগ্রিক অবস্থানকে প্রকাশ করে কি না জানতে চেয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে পররাষ্ট্র দপ্তর কোনো সাড়া দেয়নি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা, সেই সঙ্গে স্কুল ও হাসপাতালে নির্বিচারে হামলা চালানো।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার কর্মকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ বলা থেকে বিরত থাকেন এবং বলেন, “এত জলদি এটা বলা ঠিক হবে না”।
শুক্রবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি সেই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য ছেড়ে দেবেন।
“এই হামলা এটাই স্পষ্ট করল যে, রুশ হামলা কতটা বেপরোয়া ছিল এবং তাদের লক্ষ্যবস্তু কতটা নির্বিচার। এটি কেবলমাত্র সম্ভাব্য বিপর্যয়কে এমন একটি স্তরে উন্নীত করবে, যা কেউ দেখতে চায় না,” কারবি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন।
“এটি অবশ্যই একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তিধর দেশের আচরণ নয়।”
ব্রিটেন প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
বিশ্বের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিচারিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম কোর্ট (আইসিসি) ৩৯টি সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধে, ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্লাস্টার বোমা এবং গোলন্দাজ (আর্টলারি) হামলার অভিযোগ তদন্ত করছে।
গত বছর আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে যোগদানকারী ব্রিটিশ আইনজীবী করিম খান বলেছেন, ইউক্রেনের সংকটের ফলে আমাদের সামনে এটি প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে যে, যারাই যুদ্ধাপরাধ করবে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক ব্যক্তি এবং বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর এই তদন্তের পক্ষে রয়েছে, বিশেষ করে সম্ভাব্য নৃশংস অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে করিম খানের সঙ্গে রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রুশ বাহিনীর বেসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক ভবনে আঘাত হানার অভিযোগটি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন।