ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোয় রাশিয়ার সব ফুটবল দলের বিরুদ্ধে ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, ফিফা স্থগিতাদেশ জারি করায় অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনও স্বস্তি প্রকাশ করছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দূরে রেখে জাতীয় দলের ফুটবলার তপু বর্মণ এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এ বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, এখন দেশটিতে ফুটবল না হওয়াই ‘ভালো’।
ফিফা কাউন্সিল এবং উয়েফার এক্সিকিউটিভ কমিটি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি যৌথভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। ফিফার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘রাশিয়ার জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বকারী দল অথবা যেকোনো ক্লাবকে ফিফা এবং উয়েফার সব প্রতিযোগিতা থেকে সাসপেন্ড করা হলো। ফিফা এবং উয়েফার এই যৌথ সিদ্ধান্ত পরবর্তী নোটিশের আগ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।"
ইউক্রেনের ভুক্তভোগী মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, "ফুটবল এখানে সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। ইউক্রেনের ভুক্তভোগী মানুষের প্রতি আমাদের সংহতি।"
রাশিয়া-ইউক্রেনের এই বিবাদকে ‘খুবই স্পর্শকাতর’ ইস্যু উল্লেখ করে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘‘যখন দুটি দেশ যুদ্ধে আছে, তখন ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়া ভালো। আমি ওইভাবে দেখছি।’’
‘‘আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে সবারই সম্পর্ক ভালো। আমি আসার পরে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার চেষ্টা করেছি। আপনি কাতার বলেন, চায়না বলেন, কোরিয়া বলেন...সব দেশের ক্লাব প্রেসিডেন্টই আমার বন্ধু। আমি সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ১২ বছর ধরে।’’
‘‘যেহেতু যুদ্ধ চলছে তাই দল না পাঠানো ভালো হয়েছে, আমি এভাবে দেখছি। পলিটিক্যালি বলছি না।’’
ফিফা এবং উয়েফার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে ২৭ বছর বয়সী তারকা ফুটবলার তপু বর্মণ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, "ফিফা এবং উয়েফা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি তার পক্ষে। ফুটবলের স্বার্থে এটা অনেক ভালো। সব দেশ এবং সবাই চাইবে স্পোর্টসে যেন কোনো সমস্যা না হয়। ফিফা এবং উয়েফা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে নিয়েছে।"
কাজী সালাউদ্দিন এবং তপু বর্মণ এ বিষয়ে কথা বললেও ‘কোড অব কন্ডাক্টের’ বিষয়টি সামনে এনে মন্তব্য করতে রাজি হননি ফিফার কাউন্সিল মেম্বার মাহফুজা আক্তার কিরন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থায় কাউন্সিল মেম্বার হয়েছেন।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কথা অনুযায়ী সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবল বিষয়ক প্রশাসনিক সম্পর্ক ভালো হলেও কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু জানালেন রাশিয়ার সঙ্গে ‘মাঠের সম্পর্ক’ নিবিড় করা কখনই সম্ভব হয়নি। ফিফা র্যাঙ্কিং এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে রাশিয়ার জাতীয় দলের সঙ্গে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। আর ক্লাব ফুটবল ইতিহাসের কিছু তথ্য পাওয়া গেছে ৭৮ বছর বয়সী টিপুর কাছে। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "রাশিয়ার জাতীয় দলের সঙ্গে খেলার তো প্রশ্নই আসে না। রাশিয়ার আর্মি টিম এসেছে সেই পাকিস্তান আমলে।"
৭৮ বছর বয়সী টিপু জানিয়েছেন, দেশের ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন আসর আগা খান টুর্নামেন্টেও রাশিয়ার কোনো ক্লাব কখনও আসেনি।
ইউক্রেন সম্পর্কে জানালেন টিপু, "তখন তো সোভিয়েত ইউনিয়ন, ওদের ডায়নামো কিয়েভ ক্লাব এসেছিল। তিনটি প্রীতি ম্যাচ হয়েছিল: চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং রাজশাহীতে। এভাবে খেলা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় দলের সঙ্গে খেলার কখনও স্কোপ হয়নি।"
ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের কারণে ফিফা যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে তার পেছনে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তাকে বড় করে দেখছেন জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার, "ফিফার জন্য খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেক দেশ ওদের সঙ্গে খেলতেই চাচ্ছে না। এটা বড় প্রবলেম।’’
‘‘ফিফা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি অবশ্যই ভালো। এখন তো অনিশ্চিত। কবে যুদ্ধ থামবে বলা যাচ্ছে না। ফিফা তো আর টালবাহানা করার মতো সংস্থা না। সরাসরি খেলা বন্ধ করে দিয়েছে।’’