বিশ্ব আদালত সোমবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার প্রাথমিক যুক্তিতর্ক শোনা শুরু করেছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় দেশটিকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথিত গণহত্যা বন্ধের আবেদন জানানো হয়। শুনানিতে জান্তার প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সভাপতি হিসাবে বিচারক জোয়ান ডোনাহিউ এক বছর আগে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে কে জাতিসংঘের আদালতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণ দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেয় নি।
৪ দিনের শুনানি পর্বে সোমবার ছিল প্রথম দিন, যেদিন পূর্বেকার পরিচিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত(ICJ) এর এখতিয়ার সম্পর্কে জান্তার আপত্তির বিষয়টি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
তথাপি জান্তা আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রশাসনের সদস্য নিয়ে গঠিত সমান্তরাল অসামরিক ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের প্রতিনিধি ও জান্তার অন্যান্য বিরোধীরা আদালতের এখতিয়ারকে মেনে নেবেন , তবে তারাও মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করতে চান।
২০১৯ সালে বিশেষত আফিকার মুসলিম প্রধান একটি দেশ, গাম্বিয়া এই মামলাটি উত্থাপন করে, যার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে ৫৭টি রাষ্ট্র সম্বলিত অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশন বা ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা।
গাম্বিয়ার দাবি মিয়ানমার জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লংঘন করেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ তারা ২০১৭ সালের নৃশংস ঘটনার উল্লেখ করে, যখন সামরিক সরকারের দমন অভিযানের পর ৭ লক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে পার্শবর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। জাতিসংঘের অনুসন্ধানী মিশন এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোয় যে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানে "গণহত্যা কার্যকলাপ" অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানায় পুলিশ চৌকি আক্রমণকারী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তারা বৈধ অভিযান চালিয়েছিল।
জান্তার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয় মন্ত্রী, কো কো হ্লেইং মিয়ানমারের মামলাটি সংক্ষেপে আদালতে উত্থাপন করেন এবং আদালতকে আশ্বস্ত করে বলেন, সামরিক সরকার বিচারকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়।
তারা যুক্তি দেখান যে গাম্বিয়া অন্যানদের হয়ে মামলা দায়ের করেছে এবং আদালতে মামলাটি উত্থাপনে তাদের কোনো আইনি বৈধতা নেই, কারণ কথিত এসব অপরাধ তাদের অঞ্চলে বা গাম্বিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় নি ।
আদালতের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান্তার প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি না দিতে বিচারকদের কাছে আবেদন জানান।
মিয়ানমারের অসামরিক প্রশাসনের নেতা, অন সান সূচি ২০১৯ সালে দ্য হেগ শহরে অনুষ্ঠিত মামলাটির প্রাথমিক শুনানিতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনিও কোনো গণহত্যা সংগঠিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে সামরিক অভ্যুথানের পর তাকে আটক করা হয়।
আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের সদস্য, আম্বিয়া পারভীন বলেন, জান্তা যখন মিয়ানমারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, তাই মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা হবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তিনি বলেন, "গণহত্যায় জড়িতদের অবশ্যই বিচার করতে হবে"।
[রয়টার্স]