চীন-পাকিস্তান নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্কের তাৎপর্য বিশ্লেষণ

সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি দ্বারা প্রকাশিত এই ছবিতে, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এ তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তোলা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ছবি- এপি

চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে নতুন বেশ কয়েকটি আর্থিক চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে এবং এতে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে প্রভাব পড়ার ইঙ্গিত রয়েছে।

শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সময় বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যে বৈঠকের পর চীন ও পাকিস্তান একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশ "অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত, শিল্প, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, মহাকাশ, ভ্যাকসিন, ডিজিটালাইজেশন, মান-নির্ধারণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে,"।

জিনজিয়াং-এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রতিবাদে অলিম্পিক গেমস যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কূটনৈতিক ভাবে অলিম্পিক গেমস বর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়। মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি চীন অস্বীকার করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক উত্তেজনার এই সময়ে বেইজিংয়ের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন।

বৈদেশিক নীতি বিষয়ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একজন ফেলো মাদিহা আফজাল বলেন, "আমি মনে করি ইমরান খানের সফর সত্যিই এই বয়কটের প্রেক্ষাপটে চীনের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনই প্রদর্শন করে । তাই এটি সমর্থনের প্রকাশ্য প্রদর্শন, বিশেষ করে তার সাথে চীনে উচ্চ-পর্যায়ের মন্ত্রীরা যে বিপুল সংখ্যায় সফর করেছিলেন সে কারণেও "।

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্ক

বেইজিং এবং ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয় ১৯৫১ সালে, এবং উভয় দেশের মধ্যে মৈত্রী দৃঢ় হয় কারণ উভয় দেশই স্বীকার করে যে তাদের একটি অভিন্ন প্রতিপক্ষ রয়েছে। তা হচ্ছে ভারত এবং ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে প্রথম বাণিজ্য চুক্তি ১৯৬৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৩ সালে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়।চীনের অর্থায়নে তৈরি এই প্রকল্পের লক্ষ্যই হচ্ছে পাকিস্তানের অবকাঠামো এবং এর অর্থনীতির উন্নতি সাধন। সিপিইসি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য এবং সিপিইসি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কারণ চীন পাকিস্তানের বৃহত্তম ঋণদাতাদের মধ্যে একটি, পাকিস্তানের ঋণের ২৭ শতাংশেরও বেশি রয়েছে চীনের কাছে।

হাডসন ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো অপর্ণা পান্ডে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "চীনের কোনো বন্ধু বা মিত্র নেই। চীনের সাথে অনেক দেশের সম্পর্ক হচ্ছে তাঁরা চীনের কাছে ঋণী।"

পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি

মহামারীর কারণে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য বেড়েছে, তাই বেড়েছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশার সূচক, ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন বা জিডিপি ২৬.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি আংশিকভাবে পুনরুদ্ধার করেছে।

পাকিস্তান তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে। গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য ৬০০ কোটি ডলারের উদ্ধার পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করেছে যা মূলত ২০১৯ সালে অনুমোদিত হয়েছিল।