বাঙালির মেধা মনন সৃজনশীলতার উৎসব অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার

অমর একুশে বইমেলা

বাঙালির মেধা মনন সৃজনশীলতার সবচেয়ে বড় আয়োজন অমর একুশে বইমেলা কাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। কোভিড–১৯ অতিমারির সংক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকায় বইমেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই মাসব্যাপী এই বইমেলা শুরু হয়। তবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মেলা শুরুই হতে পারেনি। আর এবার মেলা শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহের জন্য।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় ভার্চ্যুয়ালি মেলার উদ্বোধন করবেন। এবার মেলার মূল প্রতিপাদ্য “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।”

উল্লেখ্য, গত বছর কোভিড অতিমারির কারণে মেলা শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ। প্রথমে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও দুই দিন আগেই ১২ এপ্রিল মেলা শেষ হয়। এবার মেয়াদ দুই সপ্তাহ করা হলেও প্রতিদিন মেলার শুরুর সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে। আগে মেলা শুরু হতো বিকেল ৩টায়। এখন প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে প্রবেশ করা যাবে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ছুটির দিনে মেলার দ্বার খুলবে বেলা ১১টায় এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে সকাল ৮টায়।

মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে মেলা উপলক্ষে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। এতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, “প্রকাশকদের আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত মেলা হবে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা সাপেক্ষে মেলার মেয়াদ বাড়তে পারে। তবে এখন দুই সপ্তাহ মেয়াদের জন্যই মেলা করা হচ্ছে। প্রকাশকদের কাছ থেকেও স্টল বরাদ্দ ভাড়া অর্ধেক হারে নেওয়া হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

মেলায় এবার স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অত্যন্ত কাড়কড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদলত থাকবে। সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একাডেমির কর্মকর্তা–কর্মচারি, প্রকাশক এবং স্টল সংশ্লিষ্টদের টিকার সনদ থাকতে হবে। এ ছাড়া মেলার আসা গ্রন্থানুরাগীদের মধ্য যারা ফুডকোর্টে খেতে যাবেন তাদেরও টিকার সনদ থাকতে হবে। কেউ মাস্ক না পরলে বা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে জরিমানা করবেন।”

মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ হুদা বলেন, “মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। সে কারণে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করার পর বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে মেলার অনুমোদন পাওয়ায় দেরিতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। হাতে সময় কম, দ্রুত কাজ চলছে। উদ্বোধনের আগেই অবকাঠামো নির্মাণ এবং অন্য কাজ শেষ করে ফেলা হবে।”

আরও বক্তব্য দেন বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার নহবত আলী। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।

মেলার তথ্য

মোলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ। তিনি জানান, এবার মেলায় মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছ ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৬৩৪ ইউনিট স্টল। প্যাভিলিয়ন রয়েছ ৩৫টি। উদ্যান অংশে পুরো মেলায় প্যাভিলিয়নগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্যাভিলিয়ন শুধু স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনে রাখায় সমালোচনা হয়েছিল।

এ ছাড়া এবার উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পূর্বপাশে মেলার মূল প্রাঙ্গণে লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের ১২৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতবার লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের স্থান নিয়েও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।

শিশু চত্বর থাকবে মেলার উদ্যান অংশে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে আলাদা করে এবার “শিশু প্রহর” থাকবে না। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে থাকবে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার। এরপর হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির পাশাপাশি পুরো মেলা চত্বর এবং সংলগ্ন পথগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, সোহারাওয়ার্দী্ উদ্যানের টিএসসিসংলগ্ন এবং বাংলা একাডেমির সামনে মেলায় প্রবেশ পথ থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে করা হয়েছে কার পার্কিংয়ের স্থান।