ত্বকী হত্যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা

ত্বকী হত্যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। (ছবি- ইউএনবি)

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ত্বকী হত্যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের দৈনিক সময়ের পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

ত্বকী হত্যা মামলায় খসড়া অভিযোগপত্রের ওপর সংবাদ প্রকাশের জেরে আজমেরী ওসমানের অনুসারীরা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের চাষাঢ়া প্রেসিডেন্ট রোড এলাকায় সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় পত্রিকা কার্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

পত্রিকাটির সংবাদকর্মীরা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে হইচইয়ের পর তারা সেখানে থাকা সিসিটিভির ডিভাইস নিয়ে যায় ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে।

ওই সময় কার্যালয়ে পত্রিকার চার সংবাদকর্মী বসা ছিলেন।

কার্যালয়ের প্রহরী হাফিজউদ্দিন বলেন, “হঠাৎ করে শতাধিক লোকজন ওপরে উঠতে চায়। আমি তখন বাধা দিতে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে সবাই ওপরে উঠে। আমি একা সবার সঙ্গে পারছিলাম না।”

অফিসে থাকা সময়ের নারায়ণগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার আরিফ হোসাইন কনক বলেন, “বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে অফিসের নিচে শতাধিক মোটরসাইকেল অবস্থান নেয়। পরে মোটরসাইকেল থেকে শতাধিক লোকজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। অফিসে ঢুকেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। তারা গত শুক্রবার দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার লিড নিউজ ‘যা ছিল খসড়া চার্জশীটে’ সংবাদটি কেন প্রকাশ হয়েছে তার কৈফিয়ত জানতে চান। তারা বলতে থাকেন, ‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস। কালকের মধ্যে পত্রিকায় এর জন্য ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দিব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলব।’”

হামলাকারীরা প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে অবস্থান করে হুমকি দিতে দিতে চলে যায়। যাওয়ার সময়ে তারা অফিসে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরার ডিভিআর ডিভাইস খুলে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া একটি পিসির হার্ডডিস্কও খুলে নিয়ে গেছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে।

এদিকে ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই হামলায় নাসির, আক্তার নূর, সুমন, সানি, ইসমাইল, আন্নান, কাজল, রুবেল, সিনাফি, রবিন, মনির, লক্ষণ, কৃষ্ণা, রাতুল প্রমুখকে চিহ্নিত করা গেছে। তাদের মধ্যে নাসির ও আক্তার নূর এর আগে একাধিকবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে এখন আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই পরিচিত।

এ ছাড়া অপর একটি ফুটেজে দেখা গেছে, অফিসে হামলার আগে শতাধিক লোকজন মোটরসাইকেলে করে শহর মহড়া দেয়। ওই মহড়া শেষ করেই সময়ের নারায়ণগঞ্জ অফিসে হামলা করে।

এ ব্যাপারে সময়ের নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বলেন, “সম্প্রতি ত্বকী হত্যা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি খসড়া চার্জশিট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। মূলত সেই খসড়া চার্জশিট ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করেন। সেটাই হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আমাদের নিজেদের মনগড়া বক্তব্য নাই। কিন্তু তারা যেভাবে অফিসে হানা দিয়েছে সেটা ন্যাক্কারজনক। তারা অফিসের সিসি ক্যামেরার ডিভিআর মেশিন ও একটি পিসির হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে।”

পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবগত। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ, অফিসের লোকজনদের সঙ্গে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।