বাংলাদেশে টানা চতুর্থ দিনের মতো সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে পঞ্চগড়ে। হিমালয়ের হিমেল বাতাসে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলার ওপর দিয়ে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার এখানে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়ার টানা এই অবস্থানে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন শীতপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়ের মানুষ।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে এখন পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলায় একটানা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে একটানা শীতের প্রকোপে জেলাজুড়ে শীত ও শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।
পঞ্চগড় জেলা শহরের পান দোকানদার আমিনার রহমান বলেন, “পান বেঁচে চলে সংসার। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। বাতাসের কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না।”
রেস্তোরাঁ শ্রমিক নুর নবী বলেন, “ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা কুঁকড়ে যাচ্ছে। রিকশা ভ্যানে চড়লে ঠাণ্ডায় কাবু করে ফেলছে।”
জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকার গৃহিণী উম্মে কুলসুম মিতা বলেন, শীতের প্রকোপ এতটাই বেশি যে, ঘরের ভেতরেও থাকা যাচ্ছে না। তারপরও আমাদের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে হয়। স্বামী, ছেলেমেয়ে তাদের জন্য তো কাজ করতেই হবে। আমাদের হাত-পা অবশ হয়ে যায়।”
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সিরাজউদ্দৌলা পলিন বলেন, “হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগ সবখানে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এ সময়টাতে এখানকার মানুষ শীত ও শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। শীতের সময়টাতে আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. শাহা আলম মিয়া জানান, ঘনকুয়াশার স্থায়ীত্ব বেশি হলে এসময়ের ফল ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তারপরও মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ঘণকুয়াশায় বীজতলা যেন ক্ষতি না হয় এ জন্য কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন শীতার্থদের মধ্যে প্রায় ৩৪ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে। শীতবস্ত্রের চাহিদা বাড়লেও জেলা প্রশাসনের কাছে নতুন করে কোনো শীতবস্ত্র আসেনি। তবে শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম।
তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, গতকালের তুলনায় আজকে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজও সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
জানুয়ারি মাসে ২০ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবং গত চারদিন ধরে এখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে তিনি জানান।