বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুজহাত ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৭ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এফডিসির বর্তমান পরিচালকের দ্রুত অপসারণ চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন ১৭ সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এফডিসিতে চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের সদস্যদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগে নুজহাত ইয়াসমিনের কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছেন তারা।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার পর এই কর্মসূচি পালন করেন ১৭ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে আন্দোলন শুরু করে ১৭ সংগঠন। সেখানে পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, “বর্তমান এমডিকে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই না। সরকার চাইলেও তিনি থাকতে পারবেন না। প্রয়োজন আমরা রাস্তায় শুয়ে থাকব।”
শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে এই পরিচালক আরও বলেন, “এবারের নির্বাচনে এমডি একটি প্যানেলের সাপোর্টে কাজ করেছেন। যার কারণে তিনি চাননি আমরা ভেতরে থাকি। যেটি সবার জন্য অপমানজনক। তাই তিনি এফডিসিতে এমডি থাকতে পারবেন না। আর তিনি থাকলে আমরা কেউ থাকব না।”
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আরও দুই দফা দাবি জানানো হয়েছে। প্রথমত, এবারের নির্বাচনের প্রধান কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, শিল্পী সমিতির নির্বাচন আর এফডিসিতে হতে পারবে না।
আন্দোলনে পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করে এমডি আমাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি আমাদের অপমান করেছেন। এই এমডি চলচ্চিত্রবান্ধব নন। আমরা তার অপসারণ চাই। তার কাছে আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনায় গিয়েছি তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাকে এবার গেটের বাইরে পাঠাব।”
পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, “এফডিসির গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলোর মধ্যে পরিচালক ও প্রযোজক সমিতি। প্রযোজকরা টাকা লগ্নি করে বলে আমরা সিনেমা বানাই। আর এতে এফডিসি চলে। সেই আমাদেরই প্রবেশ করতে না দিয়ে অপমান করা হলো। বর্তমান এমডির সব কাজ চলচ্চিত্র বিরোধী। এবারের নির্বাচনে সবার প্রবেশ নিয়ে তার সঙ্গে আমরা বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি।”
প্রযোজক ইকবাল বলেন, “বর্তমান এমডি প্রায় ৭ বছর ধরে দায়িত্ব নিয়েছেন। এ সময়ে শুটিং স্পটের ভাড়া বেড়েছে। যন্ত্রপাতির ভাড়া বেড়েছে। এত টাকায় আমরা কিছুই নিতে পারি না। শুটিংয়ের জন্য একটি সূতা লাগলে সেটাও বাইরে থেকে আনতে হয়। আপনি আমাদের জন্য এই কয়েক বছরে কিছুই করেননি। শুধু অপমান করেছেন।”
আমি কোনো অন্যায় করিনি–বিএফডিসির এমডি
নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনার পরিচালক (এমডি) নুজহাত ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, “আমার তরফ থেকে কোনো অন্যায় করিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তারা যদি কথা বলতে চায়, আমি রাজি আছি। কিন্তু তারা যেই অভিযোগ করছেন সেগুলো আমার বিরুদ্ধে আসে না।”
রবিবার এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার ১৭ সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সম্মেলনে বলা হয়েছে, এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিনকে এফডিসিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এ বছরের নির্বাচনে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন এমডির অনুমতিতেই সব হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি অস্বীকার করে নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, “প্রশাসন কীভাবে কাজ করবে সেটি তাদের দাযিত্ব ছিল। আর কর্তৃপক্ষ থেকে যেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তারও একটা লিখিত কপি তার কাছে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, এবারের চলচ্চিত্র সমিতির নির্বাচনে এফডিসিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ১৭ সংগঠনের সদস্যদের। এ নিয়ে বিএফডিসি প্রাঙ্গণে উত্তাল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।