হংকং বিশ্ববিদ্যালয় ঢেকে দিল তিয়েনআনমেন স্কয়ারের শেষ স্মৃতিস্মারক

নির্মাণ কর্মীরা হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে নিহতদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মারক ঢেকে দিচ্ছেন।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে নিহতদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মারক গত মাসে অপসারণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবার ক্যাম্পাসে অবস্থিত সর্বশেষ স্মৃতিস্মারকটিও ঢেকে দিয়েছে।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) হংকংয়ের সবচেয়ে পুরানো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের ক্যাম্পাসে অবস্থিত ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত এই স্মৃতিস্মারকটি ঢেকে দেয়। এর মধ্যে দিয়ে বেইজিং তার আর্থিক কেন্দ্রে ভিন্নমতের মুখ বন্ধ করে চলেছে৷

হংকংই চীনের একমাত্র স্থান যেখানে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনার স্মরণে বিভিন্ন কার্যক্রম ইতিবাচক চোখে দেখা হতো। তবে কর্তৃপক্ষ শহরটির ওপর একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করে এই কার্যকলাপ মাটির নিচে চাপা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ভিন্নমত দমনে চীন সরকার হংকংয়ে ২০১৯ সাল থেকে এখনও ধরপাকড় অব্যহত রেখেছে।

গত মাসে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সামরিক হামলায় নিহতদের স্মরণে একটি স্মারক অপসারণ করে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়। ওই একই সময় কমপক্ষে আরও দুটি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাস থেকে নিহতদের স্মরণে নির্মিত শিল্পকর্ম অপসারণ করেছিল।

এএফপি প্রতিবেদক দেখেছেন, নির্মাণ শ্রমিকেরা টিনের পাত দিয়ে শনিবার ক্যালিগ্র্যাফিটি ঢেকে ফেলে। এতে লেখা ছিল, “আততায়ীর নির্দয় আঘাতে প্রাণ দিয়েছেন যে শহীদরা তাদের সে দূর্বার প্রাণশক্তি থাকবে বহমান, সকল অশুভকে গ্রাস করে গণতন্ত্রের যে শিখা তা থাকবে অনির্বাণ”।

সামরিক হামলার কিছুদিনের মধ্যে নির্মিত এই শিল্পকর্মটি তিন দশক ধরে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভা বর্ধন করে আসছিল।

প্রতিবছর ছাত্রনেতারা নিয়ম করে ক্যালিগ্রাফিটি নতুন করে রং করেন।

লেখাটি সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা হবে কি না জানতে চাইলে বিশবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক কিছু জানায়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে এর স্থাপনাগুলোর সংস্কারকাজ চালিয়ে থাকে।

এশিয়ার মধ্যে সেরা হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ভিন্নমতের ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। যদিও চীনের মূল ভূখণ্ডের বিশবিদ্যালয়গুলোতে ভিন্নমত দমনে নানান বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে উদ্ভূত ব্যাপক গণআন্দোলনের সূত্র ধরে চীন সরকার এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হংকংয়ে ব্যপক দমননীতি অবলম্বন করে।

“দেশপ্রেম” লালনের নামে দেশটি ভিন্নমতকে আইন করে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এ ছাড়া ৪ জুন মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে তিয়েনআনমেন দিবস পালন করাও নিষিদ্ধ করেছে।

এই দিবস পালনের দায়ে একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তিয়েনআনমেনে সংগঠনটি পরিচালিত একটি জাদুঘর বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার।

“পিলার অব শেইম” নামক স্মারকটি অপসারণের পর হংকং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে বাহ্যিক আইনি পরামর্শ এবং ঝুঁকি নিরূপণের ভিত্তিতে এই স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”।