একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার- রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম

দূতাবাসের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, এবং ১৫ই আগস্ট, বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের নেয়া কর্মসূচীসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে সম্প্রতি কথা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম। ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন শতরূপা বড়ুয়া। ​

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারটি এখন কোন পর্যায়ে আছে? রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সরকারকে রাজি করানোর জন্য আপনারা কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

রাষ্ট্রদূত: মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে ২০১৯ সালে দুদফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার যথাযথ পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় এবং রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে আগ্রহী না হওয়ায় তাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত উদ্যোগসমূহ শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়৷ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে নিয়মিত যোগাযোগ বিদ্যমান থাকলেও এ সমস্যার সমাধানে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সর্বদা জাগ্রত রাখতে অব্যাহতভাবে যেসব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ তাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। আমরা দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি আইনি কাঠামোর মধ্যেও কাজ করছি। রোহিঙ্গা সমস্যার শিকড় মিয়ানমারে নিহিত। তারা এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর সমাধানেও তাদের সদিচ্ছাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরকার। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের উপর আর্ন্তজাতিক চাপ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

ভয়েস অফ আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে আপনাদের বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কি? বিশেষ করে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যে রোড শো-সহ নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, গত কয়েক বছরে, এগুলো থেকে কতটা বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য জোগাড় করা গিয়েছে?

US-Bangladesh Business Council আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম।

রাষ্ট্রদূত: একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের অন্যতম বাজার। দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি দ্বৈত-কর এড়ানোর জন্যও চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত ভাবে Department of Labor কে অবহিত করা হচ্ছে। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস USTR, Department of Labor, Department of Commerce ও AFL-CIO এর সাথে নিয়মিত বিভিন্ন সভায় মিলিত হচ্ছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী/বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে দূতাবাস US Chamber of Commerce, US-Bangladesh Business Council এর সাথে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান লাভজনক বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে যথাযথ তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের নিকট তুলে ধরা আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য। বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে (যেমন labor cost, utility cost, 12-15 years tax holiday, 100% profit & amp; capital repatriation, operating cost) ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত থেকে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খুব অল্প সংখ্যক বিনিয়োগকারীই জানেন। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বিদ্যমান বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে এদেশের বিনিয়োগকারী/উদ্যোক্তাগণ অবহিত নন। এজন্য তাঁদের নিকট বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, অবকাঠামো, সহজে ব্যবসা করার ব্যবস্থাদি, বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশে বিনিয়োগ অন্যান্য দেশের তূলনায় কেন অধিক মুনাফা অর্জনে সহায়ক ও সুবিধাজনক-এ বিষয়গুলো দূতাবাসের উদ্যোগে বিভিন্ন ফোরামে নিয়মিতভাবে তুলে ধরা হয় । এছাড়া, সরকার ও দূতাবাসের উদ্যোগে বিভিন্ন Promotional কার্যক্রমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে Branding Bangladesh সহ নানা জোরদার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের Investment Promotion Authority (IPA)-গুলোর উদ্যোগে রোড শো-সহ নানা রকম কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ব্যবসা-বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে তুলে ধরা, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বাজারের সুবিধার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে দু-দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সঠিক ও যথাযথ ধারনা দেয়ার আমাদের এ সকল প্রচেষ্টার ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশাবাদী।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও সার্বিক বাক স্বাধীনতা নিয়ে সম্প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, এব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

রাষ্ট্রদূত: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। আপনি লক্ষ্য করবেন এই সরকারের সময়ে বাংলাদেশে ৩৪টি বেসরকারী টিভি চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও স্টেশন এবং ১৭টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেল অনুমোদন লাভ করে যা পূর্বের যে কোন সরকারের আমলের চেয়ে অনেক বেশী। এছাড়া, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায় মিলে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২৮০০ পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে যা নি:সন্দেহে গনমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার একটি বহি:প্রকাশ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আইসিটি ও ডিজিটাল সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এটি মূলত সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন গ্রহণের ফলে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদের এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। ডিজিটাল সেক্টরে এই অভূতপূর্ন উন্নতির ফলে একদিকে যেমন সরকারের সেবাগুলো জনগনের দোড়গোড়ায় পৌছে দেয়া সম্ভব হয়েছে তেমনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বাংলাদেশের মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরও প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু একই সাথে সাইবার অপরাধ, ডিজিটাল মিডিয়ার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা প্রোপাগ্রান্ডা ছড়ানো এবং তার ফলে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতার প্রবনতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশ ও জনগনের সাইবার তথা সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি জাতীয় সংসদে পাশ করে যা সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সাথে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সাইবার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা হুমকির কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেই এ জাতীয় আইন করা হয়েছে এবং তা চালু রয়েছে। কিন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম, এনজিও এবং মানবাধিকার সংগঠন এ আইনকে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাধা হিসাবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন করছে।

একথা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জনগনের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল এবং তা সুসংহত রাখতে দৃঢ়ভাবে বদ্ধপরিকর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনভাবেই এই স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতা নয় বরং তা বাংলাদেশে একটি নিরাপদ ও অনুকূল সাইবার পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে পরিপূরক ভূমিকা পালন করে আসছে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ শোকের মাস আগস্ট, এবারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে, ১৫ই আগস্টে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আপনাদের কর্মসূচি কি?

বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছেন রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম। ২৬শে মার্চ, ২০২১।

রাষ্ট্রদূত: জাতীয় শোক দিবস ২০২১ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস বেশ কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দূতাবাসে আয়োজিত কর্মসূচীর মধ্যে থাকবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, জাতির পিতার আবক্ষ ভাস্কর্যে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনাসভা, এবং বিশেষ প্রার্থনা। কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দূতাবাসের সকল সদস্য শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া মান্যবর রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাস পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের আইকনিক বিলবোর্ডে আয়োজিতব্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ প্রবাসী বাংলাদেশীদের, বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শকে তুলে ধরতে আপনারা দূতাবাসের পক্ষ থেকে কী কী করছেন?

রাষ্ট্রদূত: প্রবাসী বাংলাদেশীদের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শকে তুলে ধরতে আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অন্যান্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণার বিপরীতে আমরা আমাদের জন-কূটনীতি পদক্ষেপ অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে। দূতাবাস থেকে আমরা একটি মাসিক নিউজলেটার প্রকাশ করছি যা প্রবাসীদের নিকট পৌছে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের সঠিক প্রতিফলন সেখানে হচ্ছে। আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে সচেতন প্রবাসীগণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের যে কোন উদ্যোগ ও আয়োজনে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছি । উদাহরণস্বরুপ আগামী ১৫ আগস্ট নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের আইকনিক বিলবোর্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক যে দিনব্যাপী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে দূতাবাস তাতে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করেছে। ভবিষ্যতেও প্রবাসীদের অনুরূপ উদ্যোগ ও আয়োজনে দূতাবাসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি এবছর উদযাপন করছে, ডায়াস্পোরা কমিউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার ও ইতিহাস বিকৃতি রোধের জন্য আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?

রাষ্ট্রদূত: মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করা, সকলকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো ও সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দূতাবাস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দূতাবাসের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাসিক নিউজলেটারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়াও দূতাবাসের বিভিন্ন প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকাশনা দূতাবাসে আসা প্রবাসীদের মাঝে নিয়মিতভাবে বিতরণ ও সরবরাহ করা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণা এবং প্রচার নিয়ে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও সংগঠনসমূহকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে দূতাবাস। এ বিষয়ে নিকট অতীতে দূতাবাসে বেশ কিছু সেমিনার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা বরেণ্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। নিকট ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনেরও পরিকল্পনা করেছি। দূতাবাসে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা নতুন প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ তৈরি করছে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পক আরও শক্তিশালী করার জন্য কোন কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

রাষ্ট্রদূত:

১) বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার সর্ম্পক বিদ্যমান রয়েছে। এ সর্ম্পকের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শান্তি, প্রগতি ও পাস্পরিক শ্রদ্ধা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিতভাবে পার্টনারশীপ ডায়ালগ ও TICFA সংক্রান্ত বৈঠকসহ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরপত্তা, ও সন্ত্রাসদমনে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

২) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের এবং এই দুই দেশের জনগণের মধ্যে মেলবন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনেতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতামূলক সর্ম্পক আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

৩) বর্তমানে দুই দেশের সরকারের মন্ত্রী পর্যায় ও সরকারী-বেসরকারী অন্যান্য পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ নিয়মিত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, যা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমাদের এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার জন্য দুই দেশের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিপাক্ষিক সফর করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

৪) যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

৫) কোভিড-১৯ উদ্ভুত পরিস্হিতি ও কোভিড পরবর্তী সময়ের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়টি আমরা অ্রগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দ্বিপাক্ষিক ও আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে একযোগে কাজ করার বিষয়েও দুদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি কোভিড সহায়তা রওয়ানা হওয়ার আগে Travis Air Base-এ রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম।

৬) সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত US-Bangladesh Economic Partnership Meeting বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সর্ম্পককে আরও জোরদার করবে বলে আমরা আশা করছি। এছাড়া, নবগঠিত US-Bangladesh Business Council দু দেশের মধ্যে ব্যবসা বণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষে ভূমিকা পালন করে আসছে।

৭) বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও কারিগরি সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি।

৮) বাংলাদেশের বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে (Special Economic Zones) মার্কিন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

৯) সরকারী প্রচেষ্টার পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যে আরও নিবিঢ় যোগাযোগ স্হাপন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে বিশেষভাবে অবদান রাখতে পারে। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী Diaspora আমাদের দুই দেশের মধ্যকার অংশীদারিত্ব মুলক সর্ম্পকোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।