করোনায়- ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষুধার্তের পাশে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকনিক সমর্থক শোয়েব আলী।
বাঙালীদের কেউ তাকে চেনেন টাইগার নামে, কেউ চেনেন শোয়েব আলী নামে, আবার কেউ চেনেন বুখারী নামে। পেশায় মটর মেকানিক এই তরুণের প্রকৃত নাম শোয়েব আলী বুখারী। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমর্থক হিসেবে অতি পরিচিত মুখ তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে বাঘ সেজে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ স্লোগানে মুখর করা শোয়েব দেশের এই করোনা ক্রান্তিকালে ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন। অবশ্য এই প্রশংসাতে শোয়েব এর তেমন কোন আনন্দ লক্ষ্য করা গেল না। তিনি বলেন প্রশংসা নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই, মানুষকে খাদ্য দিতে চাই।
শুরু থেকে বলা শুরু করলেন শোয়েব।
বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তখন শোয়েব একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানীতে গাড়ী চালাতেন আর মাঝে মাঝে মটর মেকানিকের কাজ করতেন। রাতে যখন যাত্রী নিয়ে তিনি গাড়ী চালাতেন তখন রাস্তায়, রেল স্টেশনে, বাস স্টেশনে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখগুলি তিনি দেখতে পেতেন, তিনি বিষন্ন হতেন। তখন থেকেই নিজের সাধ্য অনুযায়ী নিজের সামান্য আয় থেকে মানুষকে খাবার কিনে খাওয়াতেন, আর সেই দৃশ্য দেখে এক হৃদয় সুখ নিয়ে বাড়ী ফিরতেন।
এমন করে দিন যাচ্ছিল শোয়েবের।
এরমধ্যেই দেশে এলো করোনা ভাইরাস। দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে সরকার কর্তৃক অঘোষিত লকডাউনের পাশাপাশি এলাকা ভিত্তিক ঘোষিত লকডাউনে প্রায় স্থবির হয়ে পড়লো দেশ। কর্মহীন হয়ে পড়লেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অগনিত মানুষ। কদিনের মধ্যেই নিম্ন আয়ের মানুষের দরজায় ভীড় করলো ক্ষুধার জ্বালা। শোয়েব তখন নিজের বাসার রান্না করা খাবার নিয়ে ক্ষুধার্তের পাশে দাঁড়ালেন। কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের তুলনায় তার কাছে থাকা খাবারের পরিমান ছিল অতি অল্প। তিনি তার পরিচিত অনেক মানুষকে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজি হচ্ছিলেন না। শোয়েব তখন কি করবেন ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ তার মাথায় এলো এক অভিনব বুদ্ধি।
তিনি তার ফেসবুক এ লিখলেন - “কেউ যদি এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষকে রান্না করা খাবার দিতে চান, তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমি আপনার বাসা থেকে খাবার সংগ্রহ করে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌছে দেব।” সাথে সাথে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া শুরু করলেন শোয়েব। অনেকেই যোগাযোগ করলেন শোয়েবের সাথে। শুরু হলো নতুন এক অধ্যায়।
বিভিন্ন মানুষ তাদের বাসায় রান্না করা খাবার, খাবারের উপকরন কিংবা উপাদান দেয়া শুরু করলেন শোয়েবকে। আর শোয়েবও সেগুলি নিয়ে পৌছে যেতে থাকলেন ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে। শুরুতে রাস্তায়, রেল স্টেশনে, বাস স্টেশনে ক্ষুধার্ত মানুষকে তিনি খাবার দিতে থাকলেন । পরে দেখলেন বাইরে থাকা মানুষ সামান্য হলেও খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন কিন্তু বস্তি এলাকার নারী ও শিশুরা ক্ষুধায় বেশি কষ্ট পাচ্ছেন । তখন শোয়েব কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক এর সাহায্যে রান্না করা খাবার পৌছে দিতে লাগলেন বস্তি এলাকার বাসায় বাসায়।
এরপর দেশে আসলো ঘূর্ণিঝড় আম্ফান । শোয়েব এবার খাদ্য সহায়তা নিয়ে চলে গেলেন ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে । কখনও সাতক্ষীরার শ্যাম নগর, প্রতাবনগর ও চাকলা, আবার কখনও খুলনার কয়রা উপজেলার হরিনখালিতে গলা পানিতে খাদ্য নিয়ে ছুটে গেছেন তিনি। এটা একদিনের ঘটনা নয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান চলে গেলেও সেই থেকে এখনও শোয়েব আলী খাদ্য নিয়ে ছুটে চলছেন ।
শোয়েব ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অগনিত অনেক মানুষের প্রতি, যারা নিজের নাম গোপন রেখে মানুষের জন্য রান্না করা খাবার শোয়েবের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সমাজের অবস্থা সম্পন্ন সকল মানুষের প্রতি শোয়েবের অনুরোধ, তারা যেন দেশের এই নিষ্ঠুর পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান । আমৃত্যু মানুষের পাশে থেকে মানবতার জয়গান গাইতে চান শোয়েব আলী বুখারী।