শাগুফতা নাসরিন কুইন
আজ নারী কন্ঠে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব -- আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস এবং সুদানে মহিলাদের নতুন ফুটবল টিম।
এই শুক্রবার ১১ই অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হবে। বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর ১১ অক্টোবর এই দিনটি পালন করে।
এই দিবসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লিংগ বৈষম্য দূর করা। এছাড়াও শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনী সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক তথা বাল্যবিবাহ রোধ করা -- ইত্যাদি নিশ্চিত করাও এর লক্ষ্য।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নামের বেসরকারী অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠ পোষকতায় একটি প্রকল্প রূপে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের সূচনা। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল Because I Am a Girl অর্থাৎ "কারণ আমি একজন মেয়ে" শীর্ষক অভিযান শুরু করে। এই আন্দোলনের মূল কার্যসূচী ছিল গোটা বিশ্বজুড়ে কন্যার পরিপুষ্টি সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই সংস্থার কানাডার কর্মচারীরা সকলে এই আন্দোলনকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে কানাডা সরকারের সহায়তা নেয়।
কানাডাই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছর এর একটা থিম বা প্রতিপাদ্য থাকে।
প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা’। দ্বিতীয় বার, ২০১৩ সালে থিম ছিল "মেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্র অভিনব করে তোলা"। তৃতীয় ও চতুর্থ বারের থিম ছিল, "কৈশোরকে ক্ষমতা সম্পন্ন করা ও হিংসা চক্র বন্ধ করা" ও "কৈশোর কন্যার ক্ষমতা: ২০৩০ র পথ-প্রদর্শক"। ২০১৬ সালের এই দিবসের থিম হল "মেয়েদের উন্নতি=লক্ষ্যর উন্নতি"। ২০১৭ সালের কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মেয়েদের ক্ষমতায়নে জরুরী সহায়তা ও প্রতিরোধ পরিকল্পনা’। গত বছর ২০১৮ সালে প্রতিপাদ্য ছিল থাকলে কন্যা সুরক্ষিত, দেশ হবে অলোকিত।
জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে এ বছর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের থিম হচ্ছে “GirlForce: Unscripted and Unstoppable,” --কন্যা শিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা।
আশা করছি কন্যা শিশুরা যাতে এগিয়ে যেতে পারে আমরা তাদের উৎসাহ দেব—প্রেরণা যোগাবো।
**************************************
সম্প্রতি সুদানের মহিলাদের নতুন ফুটবল টিম গঠিত হয় এবং টিমের খেলোয়াড়দের অন্যতম হচ্ছেন ২১ বছর বয়সী ম্যারিলিন জাকারিয়া। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জাকারিয়া, দক্ষিণ সুদান থেকে খার্টুমে যান। কিন্তু তিনি উদ্বিগ্ন যে বহু দশক ধরে বাধা নিষেধ ও সীমাবদ্ধতার পর, সুদানের রক্ষণশীল সমাজ, মহিলাদের ফুটবল খেলা গ্রহণ করবে কি না।
খার্তুম থেকে বিস্তারিত জানিয়েছেন নাবা মোহিউদ্দীন।
সেই ছেলে বেলা থেকে ম্যারিলিন জাকারিয়া ফুটবল খেলার ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহী।
৩০ সেপ্টেম্বর মহিলাদের নতুন লীগ খেলা শুরু করে। টিমে যোগ দেওয়ার জন্য ম্যারিলিন দক্ষিণ সুদানে তার পরিবারকে ছেড়ে, সুদানে যান।
ম্যারিলিন জাকারিয়া বলেন, “আমি বাহর গাজাল রাজ্যে, ওয়াউ এ খেলতাম। সেখান থেকে আমি খার্তুমে আসি এবং তাহাদি টিমে যোগ দেই। সেরা এডওয়ার্ড এই টিমের কোচ। পড়াশুনার ব্যাপারে আমার কিছু ইস্যু ছিল তাই লীগ শুরু হওয়ার আগে আমি কিছুদিন কাজ স্থগিত রাখি। আমি তারপর তাহাদি থেকে, কর্নাক টিমে যোগ দেই।”
মহিলাদের লীগ শুরু করার আগে, তিন দশক ধরে তাদের বাধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। সুদানের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তত্তাবধানে লীগের তৎপরতা শুরু হয়।
কিছু সংখ্যক মহিলা খেলোয়াড়ের জন্য এখনও এই কাজ সহজ নয়।
জাকারিয়া বললেন তিনি যখন ফুটবল ইউনিফর্ম পরে প্রকাশ্যে যান লোকজন অপমানসূচক কথাবার্তা বলেন। ম্যারিলিন জাকারিয়া বলেন, “আমি যখন প্রশিক্ষণ নিতে যাই তখন আমি ফুটবল ইউনিফর্ম পরতে ভালবাসি। সবসময় আমার অসুবিধা হয়েছে। লোকজনের বিশ্বাস আর মতামতের মুখমুখি হতে হয়েছে। তারা প্রশ্ন করে আমি কি ছেলে না মেয়ে? আমাকে কেন দেখতে এরকম লাগে? আমাদেরকে কেন ছেলেদের মত দেখতে লাগে? তারা এরকম কথাও বলেন, সুদানের পুরুষরাই খেলায় জয়ী হতে পারে না, আমরা তো পারবোই না।”
মহিলা লীগের সমালোচকরা সামাজিক মাধ্যমে খুবই তৎপর।
বিশ্লেষকরা বলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমার আল বাশিরের ইসলামন্থী সরকার যারা নারী অধিকার সীমিত করে, তারা লীগের সমালোচকদের মদদ দেয়।
নারীবাদ বিষয়ে একজন গবেষক হচ্ছেন এহেসান ফাকিরী। তিনি বলেন, “কারণ সাবেক প্রশাসন যখন ক্ষমতায় প্রথম অধিষ্ঠিত হয়, মহিলারা যাতে ঘরে ফিরে যায়, প্রশাসন তাদের লক্ষ্য করে আইন পাশ করে এবং স্থানীয় গণ নির্দেশনা দেয়। আমি মনে করি না যে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে ৩০ বছর ধরে এই সামাজে এই সংস্কৃতিই চলে আসছে। আমাদের তা পরিবর্তনকরা প্রয়োজন।”
একটা বিষয়ে উদ্বেগ ছিল, যে খেলার সময় গন্ডোগোল হতে পারে।সেই আশঙ্কায়, দাঙ্গা পুলিশ কাছাকাছি ছিল উদ্বোধনী ম্যাচের সময়।
অবশ্য কোন সমস্যা ছাড়াই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
Women’s National Team এর কোচ আলা মহমুদ বলেন, “আমরা আশা করিনি যে ম্যাচে উপস্থিত থাকবেন উভয় পুরুষ ও মহিলারা। কিন্তু তাই হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সব কিছু ভাল ভাবেই হচ্ছে। আমরা আশা করছি লীগ যে ভাবে শুরু হয়েছে সে ভাবেই তা অব্যাহত থাকবে। এবং আমরা আশা করছি একটা জাতীয় টিম গঠন করা হবে যে টিম বিশ্বব্যাপী সুদানের প্রতিনিধিত্ব করবে।”
ম্যারিলিন জাকারিয়া বলেছেন তার মা, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন এবং খার্তুমে যাওয়ার আগে তার বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হন -- তা মেনে নিতে ও সমর্থন করতে।
জাকারিয়া আশা করছে ওর কথায় “এই নতুন সুদান” প্রবর্তনের সময় –মেয়েরা কি করতে পারে –যেমন ফুটবল খেলার ব্যাপারে -- লোকজন তাদের মত পরিবর্তন করবেন।