অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দৃষ্টান্ত স্থাপনে কতটুকু সহায়ক হবে?


বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যে ধারা এবং উপ-ধারাগুলো রয়েছে তা একজন সাধারণ মানুষ কতটুকু জানেন? অপরাধ সংঘটিত হবার পর থানায় মামলা দায়ের করা এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা ঐ মামলার খবর কে কতটুকু রাখতে পারছেন? যারা নির্যাতিত তারা এবং তাদের পরিবার শুধু জানেন তাদের কি নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বিচার পেতে। অনেক সময় অপরাধীরা ধরা ছোঁওয়ার বাইরে থাকেন। ক্ষমতার ছায়াতলে থাকা অপরাধীরা সমাজে খুব নির্ভার মনে চলাফেরা করতে থাকেন কেননা তারা জানেন তাদের অপরাধের কোন বিচার হবেনা।

যাদেরকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তারা কি বিচার পাবেন? বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু মামলা দায়ের হচ্ছে কতগুলো? কেন হচ্ছেনা? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকে হতাশ হচ্ছেন। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। আর এই ফাঁকে আস্থাহীনতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু বিকৃত মানুষ। তাদের অপকর্মের তালিকা শুধু দীর্ঘই হচ্ছে।

ছোট্ট শিশু যার দিকে তাকালে মনে নিরাপত্তা, সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি, ভবিষ্যতের আলো এই কথাগুলো মনে হবার কথা তার পরিবর্তে সেই ছোট্ট শরীরটাকে কেমন করে দুমড়ে মুচরে ফেলা যায় তার চিন্তা ভাবনা ঘোরে। কিন্তু কেন? নারী বা ঐ ছোট্ট শিশুদের কি অপরাধ? ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্ররাও। এটি সবার জানা, কিন্তু এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কটি মামলা হয়েছে? বিচার পেয়েছে কজন? সংখ্যা কি কমেছে?

পরপর কয়েকটি ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের খবর প্রকাশ পাবার পর বাংলাদেশের জনগণ পথে নেমে পড়েন। তারা দাবী তোলেন সর্বোচ্চ শাস্তির। এবং তারা তাদের দাবী আদায় করেছেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড কি ধর্ষণের মাত্রা হ্রাসের নিশ্চয়তা দিচ্ছে? আন্দোলনের মাঝেই কিন্তু ঘটেছে বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা। সামাজিক মাধ্যমের বদৌলতে এখন অনেকেই এই ধরণের খবর খুব সহজে এবং দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মানুষ এখন আগের চাইতে অনেক কিছু জানতে পারছেন জানাতে পারছেন। এত প্রমাণের পরও অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন তাহলে মৃত্যুদণ্ড? সে বিচার পর্যন্ত যাওয়া কি সম্ভব?

মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিযা বলছেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচারের অভাবে ধর্ষণের মাত্রা বাড়ছে। যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অপরাধচক্র আনছেন নানা মিথ্যা অভিযোগ। ভয় দেখানো হচ্ছে সেই পরিবারকে। শিপা হাফিজা জানাচ্ছিলেন, যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানা পর্যন্ত যেতে পারেননি নির্যাতিতা অথবা তার পরিবার। বরং হয়রানির শিকার হয়েছেন। থানা থেকে আদালত পর্যন্ত স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেননি অনেকে। কারণ তাদের সেই সক্ষমতা নেই।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন বলেন, মৃত্যুদণ্ডের যে বিধান রাখা হয়েছে সে পর্যন্ত একজন অপরাধীকে নিয়ে যাওয়ার পথ নিশ্চিত করতে হবে অর্থাৎ আদালতে তার অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে সেগুলো যথাযথ কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। কেননা আইনের কিছু ধারা উপ-ধারার কারণে একজন অপরাধী খুব সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। আর তাই সর্বপ্রথম প্রয়োজন সেই ধারাগুলোকে পরিবর্তন করা।

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক ভয়েস আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্বে এমন নজির রয়েছে যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের কারণে অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। তবে এর সঙ্গে প্রয়োজন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার যাতে অপরাধী পার না পেয়ে যায়, সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।

নারীকণ্ঠের আজকের পর্বের আলোচনা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দৃষ্টান্ত স্থাপনে কতটুকু সহায়ক হবে?

অংশ নিয়েছেনঃ

শিপা হাফিজা-মানবাধিকার কর্মী

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন-এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দৃষ্টান্ত স্থাপনে কতটুকু সহায়ক হবে?
please wait

No media source currently available

0:00 0:28:04 0:00

XS
SM
MD
LG