যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান্দের কথা উঠলেই মনে হয় দাসত্ব এবং পৃথকীকরণের বিষয়গুলো। আজ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে এই গোষ্ঠীকে তাদের সামাজিক এবং জাতিগত ন্যায়বিচারের জন্য। আজ নারীকণ্ঠে শুনবেন এক ঝাক দক্ষিণ আফ্রিকিও তরুণীদের কথা যারা গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে নাগরিক অধিকার আদায়ের ইতিহাস জানতে।
ভয়েস অফ আমেরিকার হাইডি এডামস ফিটযপ্যাট্রিকের প্রতিবেদন থেকে শোনাচ্ছি দক্ষিণ আফ্রিকার এনজিও ‘ব্রেভ’ এর সহায়তায় সেই তরুণীদের ভ্রমনের কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের এলাবামা রাজ্যতে অবস্থিত নাগরিক অধিকার আদায় আন্দোলনের অনেক ইতিহাস। দক্ষিণ এফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ জন তরুণী জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভ্রমনে যাচ্ছে অতীত অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করতে।
তাদের প্রথম গন্তব্য মন্টগোমেরি। ভ্রমনের শুরুতে তরুণীরা খুব আনন্দে থাকলেও সিভিল রাইটস মেমোরিয়াল সেন্টারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার মন পরিবর্তন হয়ে গেলো। সেই নাগরিক অধিকার আন্দোলনের শহীদদের ছবি, বর্ণবাদী নির্মমতার ছবি, সেই জোড়াল আন্দোলনের ছবি, সব যেন জীবন্ত হয়ে আছে ঐ দেয়ালগুলোতে। দক্ষিণ এফ্রিকার কেপ টাউনে জন্ম এবং বড় হওয়া অড্রী ফেব্রুয়ারির জন্য এই অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।
অড্রী বলেন,'ছবিতে যেই শহীদদের দেখলাম, তারা সত্যি অনেক সাহসি ছিলেন। আমার মন ছুঁয়ে গেছে। যেই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে তা দক্ষিণ এফ্রিকাতেও ঘটেছে।'
মানবাধিকার আইনজীবীরা বর্ণনা দিচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত সহিংসতা থেকে পুনর্মিলনের কঠিন যাত্রার কথা।
বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে এই তিনশো জারে রাখা হয়েছে। বিনা বিচারে যেই কৃষ্ণাঙ্গরা মারা গেছেন সেই স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয় এই মাটি।
ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ফর পিস এন্ড জাস্টিস এ সেই আন্দোলনে সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ঐ সময় যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো তাদের প্রুতি এ এক অসামান্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন। তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন যারা দাসত্ব বরং করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।তরুণীদের পরের গন্তব্য সেলমা শহরে, যেখানে রয়েছে আরও অনেক ইতিহাস। এই সেলমা থেকে যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৫ সালের ঐতিহাসিক নাগরিক অধিকার আন্দোলনের। যা মন্টগোমেরিতে শেষ হয়।
এডমান্ড পেটাস ব্রিজ একটি ঐতিহাসিক ব্রিজ। এই ব্রিজের ওপর দিয়ে আন্দোলনকারীরা হেঁটে এগিয়ে যায়। তারা দাবী জানায় ভোট প্রদানের অধিকারের। সে সময় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে, মারাত্মক সহিংসতায় অনেকে হতাহত হয়। পরে যাকে আখ্যা দেয়া হয় ব্লাডি সানডে বিটিং।
তরুণীদের দলটি সেই ঐতিহাসিক এডমান্ড পেটাস ব্রিজের ওপর দিয়ে যায়, অনুভব করতে থাকে আন্দোলনের সেই দিনগুলোকে।
তরুণীদের দলে থাকা ট্রেসী হারলিং বলেন,'দক্ষিণ এফ্রিকার সঙ্গে আমরা এই জাতিগত বিদ্বেষের ঘটনা মেলাতে পাড়ি। আমাদের ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই জাতিগত বিদ্বেষের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি আরও দিতে হবে। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন আশা করে। কিন্তু আপনারা সেলমার দিকে দেখুন, কত দশক পার হয়েছে কিন্তু এখন সেই সমাজ গড়ে ওঠেনি।'
তরুণীদের একটি লাইনে দাড় করানো হয়। দাসত্তের একটু খানি স্বাদ দেবার জন্য।
'এই মুহূর্ত থেকে তোমরা আমার চোখের দিকে তাকানর চেষ্টা করবেনা কেননা তোমরা আমার সমতুল্য নও। আমি যদি তোমাদের ধরতে পাড়ি যে তোমরা আমার চোখের দিকে বরাবর তাকিয়ে আছো আমি তাহলে তোমার পাশের জন কে।'
এই পুরো ভ্রমন বিষণ্ণ ছিলোনা। কিছু কিছু ভালো মুহূর্ত, গরবের মুহূর্ত ছিল।
গান বাজতে থাকে...আমি এফ্রিকা কে ওপরে তুলতে চাই, সে ভারী নয়।
অস্রুশিক্ত শ্রদ্ধা জানানো হয় সেই এফ্রিকানদের প্রতি যারা যুক্তরাষ্ট্রে বন্দীদশা অবস্থায় এসেছিলেন। এবং যারা আগামী প্রজন্মের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন।