অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জিজ্ঞাসাবাদের সময় উইঘুর মহিলারা যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন


চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে একসময় আটক হওয়া উইঘুররা বলেছিলেন যে চীনা কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করেছে। অন্যান্য আটককৃতদেরকেও ধর্ষণের শিকার হতে দেখেছে।

৪২ বছর বয়সী উইঘুর মহিলা তুরসুনে জিয়াউউদুন চীনের উইঘুর মহিলা শিবিরে থাকতেন।বর্তমানে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে বসবাস করছেন। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি জানান ২০১৮ সালে উত্তর জিনজিয়াংয়ের কুনস কাউন্টিতে একটি ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে মারধর করা হয়, যৌন নির্যাতন করা হয় এবং গণধর্ষণ করা হয়।

আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলির অনুমান যে, জিনজিয়াংয়ে ১০ লক্ষ উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি-ভাষী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের ২০১৭ সালের গোঁড়া থেকেই অভ্যন্তরীণ শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

উভয়ই কাযাখ জাতির জিয়াউউদুন এবং তার স্বামী, জিনজিয়াংয়ের বাসিন্দা। ২০১১ সালে একটি মেডিকেল ক্লিনিক খোলার জন্য প্রতিবেশী কাজাখস্তানে চলে গিয়েছিলেন।

তবে ২০১৬ সালের নভেম্বরে, তারা যখন চীনে ফিরে যায়, জিনজিয়াংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে এবং ২০১৭ সালের এপ্রিলে জিয়াউউদুনকে কাজাখস্তানে ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য "পুনরায় শিক্ষা গ্রহণের” জন্য একটি অভ্যন্তরীণ শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। চীনা কর্তৃপক্ষের স্পর্শকাতর দেশ হিসেবে যে তালিকা রয়েছে তাতে কাযাখস্তান রয়েছে।


বেশ কয়েক সপ্তাহ পর, জিয়াউউদুন ঐ শিবির থেকে মুক্তি পান এবং ২০১৭ সালের জুনে পুলিশ তার স্বামীকে দুই মাসের জন্য কাজাখস্তানে যাবার অনুমতি দেয়। কাজাখস্তানে কোন "চীন বিরোধী কার্যকলাপে" অংশ নেবেন না শর্ত সাপেক্ষে জিয়াউদুনকে রেখে যেতে হয় চীনে।

জিয়াউউদুনের স্বামী চীন ফিরে যাননি এবং স্বামীর সিদ্ধান্তের জন্য তাকে শাস্তি হিসাবে ক্যাম্পে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানান ক্যাম্পে ঐ অভিজ্ঞতা ছিল "সবচেয়ে বর্বর এবং অমানবিক"।

"বিভিন্ন সময়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে মারধর করা হয়, গণধর্ষণ করা হয়," জিয়াউউদুন বলেন, অনেক বন্দী ছিলেন যারা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে যাবার পর কখনই সেলে ফিরে আসেনি এবং যারা ফিরে এসেছিল তাদের চুপ করে থাকতে বলা হত না হলে খুব খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হত।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর, শিবিরে নয় মাস কাটানোর পর, জিয়াউউদুনকে মুক্তি দেওয়া হয়। কাজাখস্তানে তার স্বামীর প্রচারের কারণে চীন কর্তৃপক্ষ চাপের মধ্যে পড়ে তাকে মুক্তি দেয়।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, চীন সরকার স্বামীর সাথে থাকার জন্য এক মাসের জন্য কাজাখস্তানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। কাজাখস্তানে, তার আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। চীনে প্রত্যাবাসনের নিয়মিত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি পরিবারের সাথে থাকতে পেরেছিলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতি দেয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গত সপ্তাহে বলেন যে জিয়াউউদুনের ধর্ষণের দাবিটি ভিত্তিহীন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, "এই নৃশংসতা বিবেককে নাড়া দেয় এবং অবশ্যই তাদের গুরুতর পরিণামের মুখোমুখি হতে হবে।"

"যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে বলেন," জিনজিয়াংয়ের জাতিগত উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলমানদের জন্য অন্তর্বর্তী শিবিরগুলিতে নারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পড়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক উইঘুর মানবাধিকার প্রকল্পের চীনা আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর জুবায়রা শামসেদিন বলেন, চীনে উইঘুর মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা কোনও নতুন ঘটনা নয়।

"সীমাবদ্ধ পরিবেশের কারণে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ওপর চীন সরকারের প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে এবং সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার কারণে, চীনা কর্তৃপক্ষ দ্বারা যৌন সহিংসতা, নির্যাতন ও নির্যাতনের শিকার বহু মানুষ কথা বলতে চান না,"

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর প্রবীণ গবেষক মায়া ওয়াং-এর মতে হান-চীন এবং উইঘুরদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, দুর্নীতি এমন পরিবেশ তৈরি করে যার কারণে অভিযানের সময় উইঘুর মহিলা এবং শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

ওয়াশিংটনের ভিকটিমস অফ কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনে অধ্যায়নরত চীনের অ্যাড্রিয়ান জেনজ ভিওএএকে বলেন যে ধর্ষণের এই অভিযোগগুলি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নতুন বিভাগ করে দিতে পারে এবং গণহত্যার প্রমাণ সরবরাহ করতে পারে। তিনি বলেন, "জিনজিয়াংয়ে যে সংকট চলছে, আন্তর্জাতিকভাবে জরুরী ভিত্তিতে এই সংকটের সমাধান করা উচিত।

XS
SM
MD
LG