অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যক্ষ্মার ঝুঁকি দক্ষিন আফ্রিকা, রাশিয়া, ভারত এবং চীনে সবচেয়ে বেশি


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বৃটেনে গত বছরের তুলনায় এক চতুর্থাংশ বেড়েছে। এবং পূর্ব ইউরোপে নতুন যক্ষ্মা রোগীর এক তৃতীয়াংশ মূল ওষুধগুলো প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যক্ষ্মা দূরারোগ্য হয়ে উঠতে পারে। ভয়েস অফ আমেরিকার সেলা হেনেসি'র প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন রোকেয়া হায়দার ও তাওহীদুল ইসলাম।

please wait

No media source currently available

0:00 0:03:38 0:00

লন্ডনে, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা গৃহহীনদের চাকরি ও বসবাসের স্থান খুঁজে দেবার মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য সেন্টার্ল লন্ডনে চালু রয়েছে এলেআলো প্রজেক্ট।

ব্রিটেনে অভিবাসীদের মধ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্যও করছে দাতব্য প্রকল্পটি।

লিথুনিয়া থেকে আসা রিমগোডাস প্লানিসিয়াস সবে মাত্র মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি বা বহু ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে ১৮ মাসের চিকিৎসা শেষ করলেন।

তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার বেশ কঠিন। তিনি বলেন, ঐ চিকিৎসা তাঁকে অসুস্থ করেছে এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলেছে। চিকিৎসা শেষ হলেও, তিনি এখনো ভুগছেন। প্লানিসিয়াস বলেন-

“আমার শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতা রয়েছে। আমি যদিও দুর্বল কিন্তু আগের মত নয়।“

এলেআলো প্রজেক্টের ম্যানেজার ডেভিড ব্যাড বলেন, যক্ষ্মাকে প্রতিরোধ করা প্রতি বছরই কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন-

“গত কয়েক বছর ধরে, মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আমরা মাত্র এক বছর আগে এই সেবা শুরু করেছি। প্রাথমিক ভাবে প্রত্যাশা ছিল, সাধারন যক্ষ্মা রোগী যারা ছয় মাসের চিকিৎসা চান, তাদের সেবা দেয়া। এবং ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই ছিল মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা ।“

রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, বৃটেনের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার সন্ধান পাওয়া গেছে। ঐসব দেশে পৃথিবীর যেকোন স্থানের চেয়ে দ্রুত যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

যক্ষ্মা সাধারনত ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠে, যখন এ্যান্টিবায়োটিকের একটি কোর্স বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোগটির ওষুধ প্রতিরোধী ধরনটি এখন সরাসরি একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াচ্ছে। 'ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন' এর যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম আবুবকর বলেন—

“আমরা পূর্ব ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে নিয়ে ভাবছি, যাদের এমডিআর-টিবি আছে ,যদিও তাদেরকে কখনো এ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়নি। এবং এটা খুবই উদ্বেগের। কারন, ওষুধের ভুল ব্যবহার নয়, মানুষ- অন্যের কাছ থেকে এমডিআর-টিবি'তে আক্রান্ত হচ্ছে।“

সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশ যেমন -দক্ষিন আফ্রিকা, রাশিয়া, ভারত এবং চীনে, বিশেষজ্ঞরা নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে দ্রুত ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা চিহ্নিত করতে পারে। ঐসব দেশেই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর দুই তৃতীয়াংশ রয়েছে।

নতুন ওষুধ আসছে। কিন্তু তা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তহবিল নেই। চলতি সম্পাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, যক্ষ্মার চিকিৎসা এবং প্রতিরক্ষার জন্য যে তহবিল প্রয়োজনীয়, তাতে ১০০ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঘাটতি রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশী সাব-সাহারা আফ্রিকার জন্য নির্ধারিত। 'ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম আবুবকর বলেন—

“আমি মনে করি আমাদের যতটুকু উচিৎ ছিল , তা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমরা যদি খুব খারাপের দিকে যাওয়া পরিস্থিতিকে সামলাতে চাই, তাহলে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশেষ করে আমরা যদি বহু ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা সামলাতে চাই।“

দ্রুত গতিতে ওষুধের গবেষনা এবং উন্নয়ন ছাড়া, যক্ষা দুরারোগ্য হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ইব্রাহিম আবুবকর।

XS
SM
MD
LG