করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ধনী এবং উন্নত দেশগুলি যখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছে, তখন উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না এবং পরিষ্কার জল অথবা পানিরও অভাব রয়েছে, সেখানকার অবস্থাটা কিরকম সেটা সহজেই অনুমানযোগ্য। এইসব দেশগুলিতে কভিড-১৯ এর মহামারী মোকাবিলা করতে সহায়তা করার জন্য ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, মাস্ক এবং অন্যান্য আরও বিভিন্ন ধরণের সরবরাহের প্রয়োজন। স্বল্প আয়ের দেশগুলি কোভিড-১৯ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পেতে যখন মরিয়া হয়ে উঠেছে, তখন তাদেরকে এমন উদ্ভাবনের জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে কিছু সংস্থা, যারা এই উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, মাস্ক এবং অন্যান্য কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার সরবরাহ এবং পরিষেবা পাওয়ার জন্য কম খরচে অর্থাৎ সাশ্রয়ী উপায় বাতলে দেবে।
ব্রাজিলের সাও পাওলোতে, কভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা এতই বেশি হয়েছিল যে, সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃতদের সমাহিত করার জন্য তাদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছিল। ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় লাতিন আমেরিকা অর্থাৎ দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও হাসপাতালগুলি অসুস্থদের যত্ন নিতে লড়াই করে চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কভিড-১৯ এর পরীক্ষার জন্য মানুষকে লাইনে দাড়াতে হচ্ছে।আফ্রিকার প্রতিটি দেশের মানুষই করোনভাই্রাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এটোমো ডায়াগনস্টিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জন কেলি বলেন, অ্যাটোমো ডায়াগনস্টিকস প্রধানতঃ এইচআইভি পরীক্ষার কিট তৈরি করে। কিন্তু এখন এটি কভিড-১৯ এর রক্ত-ভিত্তিক পরীক্ষাগুলি তৈরির করার জন্য যা যা দরকার, সেই সব তৈরি করতে প্রস্তুত। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভেন্টিলেটরগুলির বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। পোর্টেবল অর্থাৎ ব্যাটারি চালিত ভেন্টিলেটরগুলিরও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।
"গ্রেডিয়ান হেলথ সিস্টেম" নামক সংস্থাটি আফ্রিকার দেশগুলির জন্য এই ভেন্টিলেটরগুলি তৈরি করে এবং প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়ে থাকে। এটি একটি অলাভজনক চিকিৎসা প্রযুক্তি সংস্থা। এই সংস্থার প্রধান লীনা সায়ীদ বলেন, যদি এই ভেন্টিলেটরগুলি ব্যবহারে কোন সমস্যা হয়, তবে অবিলম্বে আমাদের তরফ এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।" মহামারীটি শেষ হওয়ার পরেও গ্রেডিয়ানের ভেন্টিলেটরগুলি কিন্তু ভবিষ্যতে প্রয়োজনের জন্য মজুত থাকবে। সংস্থার প্রধান লিনা সায়েদ আরও বলেন, "আমরা এটিকে এক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি হিসেবে দেখছি, কেবল কভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্যই নয়, পরবর্তী কালে আসা অনিবার্য কোন বড় সমস্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাও আমাদের খুবই দরকার।"
সরাল ডিজাইন সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড মুম্বাইয়ে অবস্থিত একটি মহারাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা, যা ঘরে বসে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে আল্ট্রা স্যানিটারি প্যাডস, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। এই সংস্থা ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। "গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জস কানাডা" নামক একটি সংস্থা স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের উদ্ভাবকদের সহায়তা করে থাকে, এই সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সাহায্যে সরাল ডিজাইন সলিউশন ফেস মাস্ক তৈরির জন্য যন্ত্রপাতিগুলিও এখন তৈরি করছে। গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জস কানাডা সংস্থার অন্যতম সহ-পরিচালক কার্লে সিলভার বলেন, "আমরা এখন যা করছি তা হল আগে থেকে যে সব উদ্ভাবনগুলিতে আমরা সাহায্য করছিলাম, সেগুলিকে আরও বেশি মনোযোগ, আরও তহবিল এবং আরও বেশি সমর্থন দিয়ে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।" এই তহবিলে অর্থ যোগাচ্ছেন কানাডিয়ান সরকার সহ বেশ কয়েকটি বিনিয়োগকারী। তিনি আরও বলেন, "আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের সরবরাহ যাতে বাড়ানো যায়, তার জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করেছি। কেননা উন্নত দেশগুলিতে আমরা দেখছি, অক্সিজেনের সরবরাহ অতটা সমস্যা না হলেও, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এটি একটা সমস্যা এবং কভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য অক্সিজেনের খুবই প্রয়োজন।"
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, আমাদের লক্ষ্য হল অবশ্যই করোনা ভাইরাস মহামারী চলাকালীন সব্রকম সহায়তা সরবরাহ করা।তবে এই মহামারী শেষ হয়ে যাবার পরেও এই দেশগুলি, যাতে আগের তুলনায় আগামী দিনগুলোতে আরও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা ব্যাবস্থা সরবরাহ করতে পারে, সেটিকেও নিশ্চিত করতে চাইছে এই সহায়তাকারী সংস্থাগুলি।