ক্যাম্পে বেঁচে থাকার মতো ত্রাণ পেলেও দুর্বিষহ রোহিঙ্গাদের জীবন। তাই অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে নিজ ভূমিতে ফিরতে ইন্ডিয়া, চীন ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রোহিঙ্গারা।
কেবল জীবন বাঁচানোর মতো খাদ্য ও পানীয় আর টিকে থাকার মতো ত্রাণ নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছে রোহিঙ্গারা। নিজের দেশ, সহায় সম্পত্তি, সুখ-দুঃখের স্মৃতি- সবই যেন টানে তাদের। কেবল ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে ভিনদেশে কতদিনই বা কাটানো যায়! নিজের চাহিদা মেটানোর মতো কোন সুযোগ নেই ক্যাম্পজীবনে। ক্যাম্পের বাইরে যেতে আছে বিধি-নিষেধ। ক্যাম্পজীবন যেন অনেকটা কারাবাসের মতোই। কতোদিনেই মুক্তি মিলবে, কিংবা আদৌ মুক্তি হবে কিনা- তাও অজানা। ভয়েস অব আমেরিকার কাছে- এমনই এক অনিশ্চিত ক্যাম্প জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন নতুন বর্ধিত ক্যাম্পের বাসিন্দা শামশুল আলম।
যদিও মাস খানেক আগে ঝুঁকিপূর্ণ একটি পাহাড়ী ক্যাম্প থেকে- অনেকটা নিরাপদ ও মজবুত এই বর্ধিত ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে তাকে- এটা কেবল মৃত্যুঝুঁকি থেকে আপাতত রেহাই পাওয়া। বাঁচার মতো বেঁচে থাকা নয়। এখানে ত্রাণের চাল পেলেও রান্না করার মতো জ্বালানী জুটেনা। নতুন বসতির ছাউনীর ত্রিপলে যে ছিদ্রটি হয়েছে, সেটিতে একটু জোড়াতালি দেয়ার সক্ষমতাও নেই শামশুর। বৃষ্টির পানি বিছানায় পড়লেও- কেবল চেয়ে থাকা।
আর সন্তানের পড়াশুনা কিংবা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্নবীজ এখানে নেই। তাই শামশুর কাছে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা যেন একেক জন ”মানব বনসাই”। তাই অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারলেই যেন মুক্তি।
জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। খাবার, পানীয়, আশ্রয়- রোহিঙ্গাদের সাথে ভাগাভাগি করেছে স্থানীয়রা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য করছে। এটা মানবিকতা; সমাধান নয়। আর এই সমাধানের পথ যত লম্বাই হোকনা কেন; সেই পথেই আগানো উচিত বলে মনে করেন রোহিঙ্গা সংকটে গঠিত জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) এর মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস।
১৯৭৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের ৩০টি ক্যাম্পে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আনান কমিশনের রিপোর্টিকে একটি চূড়ান্ত দিকনিদের্শনা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি ইন্ডিয়া, জাপান ও রাশিয়ার সহযোগিতা পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের গুরুত্বারোপ করেছেন ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহিম মুহাম্মদ।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের বিরল দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীর যে আবেগ-অনুভূতি- সহযোগিতা পেয়েছে; রোহিঙ্গারাও অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে নিজ ভূমিতে ফিরতে সহযোগিতা পাবে- এমনটা প্রত্যাশা সকলের।