অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে স্থানীয়করণের প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের


জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করলেও রোহিঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তির কারণে তা শুরু হয়নি। মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশ ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন অনেকটা অনিশ্চিত। এছাড়া আরও নানা কারণে রোহিঙ্গা সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তা মাথায় রেখেই দীর্ঘমেয়াদী মানবিক সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রয়াস দরকার বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
“Rohingya Response and Grand Bargain Commitments: Aid transparency and solidarity approach”শীর্ষক এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
রবিবার কক্সবাজারে স্থানীয় সিভিল সোসাইটি ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্লাটফর্ম সিএসও এনজিও ফোরাম আয়োজিত এই আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যৌথ সাড়া দান পরিকল্পনার চাহিদার ৭২ শতাংশ অনুদান বর্তমানে পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্য কোথাও নতুন সংকট তৈরি হলে অনুদান প্রাপ্তির হার কমে যেতে পারে। তখন রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দিতে তহবিল গঠনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকে আরও বেশি সহনশীলতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে মানবিক সেবা অব্যাহত রাখার প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত স্থানীয়করণ বাস্তবায়ন করা জরুরী।
আলোচনায় স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেন, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেও স্থানীয় করণ বাস্তবায়নে বেশি সময় নিচ্ছে। যেসব স্থানীয় উপকারভোগীর সামাজিক বনায়ন কেটে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে উঠেছে; তাদের একজনও এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। এছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে স্থানীয়রা বিপর্যস্ত। বরং দিনে দিনে উপেক্ষিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

please wait
Embed

No media source currently available

0:00 0:08:08 0:00


রোহিঙ্গাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সপরিবারে জেল খেটেছেন বলে অভিযোগ করেছেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মর্জিনা আক্তার ছিদ্দিকী।
স্থানীয় সংবাদকর্মীরা অভিযোগ তুলেন, রোহিঙ্গা সংকটের প্রথম মুহূর্তটি থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। রোহিঙ্গাদের দূর্দশার চিত্র যেমন বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন, তেমনি নিজেরাও রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় মানুষ হিসেবে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের সাংবাদিকরাও। কিন্তু এতদিনেও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় সাংবাদিকরা কোন সহযোগিতা পাননি বরং দিন দিন উপেক্ষিত হচ্ছেন। ক্যাম্পে আধিপত্য বেড়ে চলেছে এনজিও এবং রোহিঙ্গাদের। বড় চাকরিগুলো দখল করে আছে বিদেশীরা। যেসব ছোটখাটো চাকরিতে স্থানীয়দের নেয়া হয়েছিল, সম্প্রতি সেখানেও স্থানীয়দের ছাঁটাই করে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এরকম বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ।
বর্তমানে ত্রাণ কর্মসূচিতে প্রায় ১৩০০ বিদেশী নিযুক্ত থাকা এবং দৈনিক প্রায় ৫৫০টি গাড়ি ব্যবহারকে অপচয় বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থলাভিষিক্ত-করণ এবং বাস সার্ভিস চালু করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এপর্যন্ত পাওয়া প্রায় ৬৮২ মিলিয়ন ডলার তহবিলের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সু-সমন্বয়ের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থের সর্বোচ্চ সেবা-মূল্য নিশ্চিত না করে ইচ্ছামতো খরচ করলে ভবিষ্যতে দাতারা উৎসাহ হারাবেন। আর তখন বিপাকে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী।
প্রতিটি সংকটে কিছুটা হলেও সম্ভাবনা তৈরি হয় বলে রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্লেষণ করেছেন বিদেশী বিশেষজ্ঞরা। আর এই সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে আগামী ৩ বছরের মধ্যে স্থানীয়করণ বাস্তবায়নের টার্গেট ধরা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সিনিয়র অপারেশন ম্যানেজার হিনাকো টোকি বলেন, ইউএনএইচসিআর স্থানীয়করণ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়করণের মধ্যদিয়ে কিছুটা হলেও সুফল পেতে পারে স্থানীয় জনগণ এবং বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের মানবিক কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পৃক্ত করতে পেশাদার প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে নিতে হবে। এতে করে স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের প্রতি আরো মানবিক হবেন এবং নিজেরাও টিকে থাকার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি কম টাকায় বেশি সেবা নিশ্চিত হবে।
এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমে কল্পিত তালিকা না বানিয়ে তৃণমূল থেকে প্রকৃত চাহিদা তুলে আনার জন্য বটম-আপ এপ্রোচে কাজ করারও পরামর্শ দিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
মানবিক অবস্থান থেকে সরে রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের মুখোমুখী অবস্থান তৈরি হলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। বাংলাদেশ সরকারের বিচক্ষণতা আর স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা পরিচালনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

XS
SM
MD
LG