সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার উপর অর্পিত সকল পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পরে রাতে একটি টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠানে আবার নিজেকে নির্দোষ দাবী করলে রাতেই শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলন শুরু করে। এবার তারা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কারের দাবীতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছে।
এসব তথ্য নিশ্চিৎ করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগে’র চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, ১৪ জন শিক্ষার্থীর মাথার চুলকেটে দেয়ার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতে প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সভা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের আলাদা করে ডাকা হয়েছিল। ঘটনার সময় মূল অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের সাথে একই বিভাগের সহকারী প্রক্টর রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল মাওয়া মুন উপস্থিতি ছিলেন। ওই দুই শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বোর্ডের কাছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা পেয়েছে বোর্ড। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনও তার অপরাধ স্বীকার করে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন। সেই সাথে দুই পক্ষের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।
পরে রাতে একটি টেলিভিশনে লাইভ প্রোগ্রামে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন বলে দাবী করেন এবং আন্দলোনরত শিক্ষার্থীদের বহিরাগত উল্লেখ করে বলেন তারা আমার ছাত্র নয়। এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা রাতেই আবারো আন্দোলন শুরু করে। বুধবার সকালে তারা ওই শিক্ষকের স্থায়ী অপসরণের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছে।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, রাতে বোর্ড মিটিংয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে তার উপর অর্পিত সকল পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু মিটিং শেষেই একটি টেলিভিশনে ওই শিক্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে আবারো নিজেকে ওই ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে মন্তব্য করেন এবং শিক্ষার্থীদের বহিরাগত উল্লেখ করেছেন। তার এমন বক্তব্যের পর রাতেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে এবং বুধবার সকাল থেকে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কারের দাবীতে আমরণ অনশনে বসে।
এ বিষয়ে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের সাথে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মুঠোফোনে ক্ষুদ্রবার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার উপর অর্পিত ৩টি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তবে স্থায়ী অপসারণের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনকে (ইউজিসি) । মানবাধিকার কমিশনের আদেশে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ এর ১৭ (ক) ধারা মতে, একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনপূর্বক অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করে আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে বলা হলো।