সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নঈম নিজাম
ভারতের রাজনীতিতে এক ধরনের চমকই ছিল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত লোকসভার সাবেক এমপি অভিজিৎ মুখার্জির তৃণমূল কংগ্রেসে হঠাৎ যোগদান। ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য হিসেবে খ্যাত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পুত্র অভিজিৎ দুবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। রবিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর সাম্প্রতিক যোগদান ও ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে।
টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এক কংগ্রেস থেকে আরেক কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি। আলাদা কিছু নেই এতে। আদর্শিকভাবে কংগ্রেসের ভিতরেই আছি। বাইরে যাইনি। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি আর ঐকমত্যের ভারতকে সুসংহতকরণে মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূলের কোনো বিকল্প নেই এই মুহুর্তে। সব ধর্ম ও মতকে ধারণ করেই বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের শক্ত অবস্থানই এই যোগদানে অনুপ্রাণিত করেছে।
অভিজিৎ মুখার্জি মনে করেন, বিজেপির বিরুদ্ধে সারা ভারত যা পারেনি মমতা তাই করে দেখিয়েছেন।
ধর্ম নিয়ে বিজেপির বাড়াবাড়ির সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, তাঁর প্রয়াত পিতার আদর্শিক রাজনীতির মূল অবস্থান ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাকে ঘিরে। সারা ভারতে তিনি এ কারণে বিশেষভাবে প্রশংসিত ছিলেন। মমতার অবস্থানও একই ধারার রাজনীতির। এ কারণে তিনি দুই কংগ্রেসকে একই আদর্শিক চিন্তার মনে করেন। তিনি বলেন, বর্তমান ও সাবেক অবস্থানের ভিতরে আদর্শিক কোনো তফাৎ নেই। একটি দল সারা ভারতে রাজনীতি করছে। আরেকটি আঞ্চলিকভাবে নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ঘিরে আছে। আলাদা করে ভিন্ন চিন্তার কোনো আদর্শ এখানে নেই। তবে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করতে কংগ্রেস যা পারেনি তৃণমূল তা করতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্যারিশমার জন্য তিনি মমতার প্রশংসা করেন।
অভিজিৎ মুখার্জি মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভারতকে সুসংহতকরণে শক্তিশালী রাজনৈতিক ওয়েব তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল। যার প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলে। সর্বস্তরের মানুষ মমতার আদর্শকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, বিজেপি দেশকে বিভক্ত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশ নেন। বিভেদ সৃষ্টি করেন বক্তব্য-বিবৃতিতে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাঝে বিভেদ তৈরি করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিজেপি। এভাবে চলতে পারে না। এভাবে চললে ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পশ্চিমবঙ্গের গত নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছিল তারা আর মাছ ভাত খেতে পারবে না। বাংলায় কথা বলতে পারবে না। হিন্দিতে কথা বলতে বাধ্য হবে কি না। আবার অনেকে এই দেশে থাকতে পারবে কি না সেই শঙ্কাও ছিল। তাদের হুমকিতে রাখা হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে আস্থা ও আশার আলো তৈরি করেন। মমতার মাঝেই মানুষ বিশ্বাস ফিরে পায়। সেই ফলাফলই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মনে রাখা দরকার ভারত সব ভাষা ও ধর্মের মানুষের আবাসস্থল। এখানে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। সব ধর্মের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। তৃণমূলের প্রতি আস্থা রেখেছে। মানুষের এ আস্থা ধওে রেখেই এগিয়ে চলছে তৃণমূল।
এবারকার যোগদানে প্রণব মুখার্জির আদর্শিক অবস্থানের হেরফের হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, না হবে না। একটা আদর্শিক রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছি। ধর্মনিরপেক্ষতা আর অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ধারা বাবার আদর্শের ভিতরেই ছিল। বাবার দেখানো অবস্থানটা ধরে রেখেই এগিয়ে যাব। বর্তমান যোগদানে কোনো কিছুরই হেরফের হবে না।
নির্বাচনী এলাকার মানুষও সবকিছু ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অভিজিৎ দীর্ঘ ২৫ বছর প্রকৌশলী হিসেবে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে কাজ করেন। এরপর তিনি কংগ্রেস থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। তৃণমূলে তাঁর যোগদানের পর ভারতীয় মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে খবরটি প্রকাশিত হয়। যোগদানের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নের পক্ষেও তাঁর অবস্থান ব্যক্ত করেন।