উত্তরপ্রদেশের কানপুর শহরের কুখ্যাত মাফিয়া ডন বিকাশ দুবে আজ সকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। গতকালই মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর একটি মন্দির থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শোনা গিয়েছে, সে নিজেই নাকি পুলিশের কাছে ধরা দেয়। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গতকাল রাতেই তাকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেয়। উজ্জয়িনী থেকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাকে নিয়ে গাড়ি করে কানপুরে রওনা হয়। আজ ভোরের আলো না ফুটতেই পুলিশের হেফাজতে বিকাশ দুবের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, মাত্র কয়েকদিন আগে কানপুরে বিকাশ দুবের বাড়িতে পুলিশ বাহিনী অভিযান চালায়। তখন মাফিয়া দলের গুলিতে দু'জন পুলিশ অফিসার সহ 8 জন পুলিশ মারা যান। সেই থেকেই পুলিশ বিকাশের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, আশপাশের সব রাজ্যে তার নামে হুলিয়া বের করা হয়েছিল। প্রশাসন বিকাশের কানপুরের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে কয়েকদিন আগে ভেঙে দেয়। তবে বিকাশ দুবেকে কোথাও পাওয়া যায়নি। কখনও দিল্লিতে, কখনও হরিয়ানায়, এদিক-ওদিক নানা জায়গায় তাকে দেখা গিয়েছে, খবর পেয়ে পুলিশ হানা দিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা যায়নি। এর মধ্যে পুলিশ বিকাশ দুবের দলের দু'জন কুখ্যাত গুন্ডাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। গতকাল সকালবেলা হঠাৎই কানপুর থেকে অনেক দূরে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে মহাকাল মন্দিরে তাকে পুজো দিতে দেখা যায়। যে দোকান থেকে সে পুজোর ফুল কিনেছিল, সেই দোকানদার তাকে চিনতে পেরে পুলিশকে খবর দেয়। মন্দির থেকে বেরোনোর সময় পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে। তখন বিকাশ চেঁচিয়ে বলে, হ্যাঁ আমি কানপুরের সেই বিকাশ দুবে। আমাকেই তোমরা খুঁজছিলে। পুলিশ তাকে ধাক্কা দিতে দিতে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। ধারনা করা হচ্ছে, আট জন পুলিশকে গুলি করে মারার বদলা নিতে পুলিশ তাকে খুন করে ফেলতে পারে এই আশঙ্কা করেই গা ঢাকা দিয়ে ক্লান্ত বিকাশ নিজে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। তবে শেষ রক্ষা যে হয়নি সেটা বোঝা গেল আজ সকালে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যুতে। পুলিশ বলেছে, দুটি গাড়িতে করে বিকাশকে নিয়ে পুলিশ দল রওনা হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ গাড়ি উল্টে যায় এবং চারজন পুলিশ আহত হন। একজন আহত পুলিশের কাছ থেকে রিভলভার ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশ পালাতে যায়। পুলিশ তাকে আত্মসমর্পণ করতে বললেও সে ছুটতে থাকে, তখন পুলিশ তাকে গুলি করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গ্রামবাসী, পথচারী প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, তাঁরা শুধু গুলির আওয়াজ পেয়েছেন কিন্তু গাড়ি উল্টে যাওয়ার শব্দ তাঁদের কানে আসেনি। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, পুলিশ ইচ্ছে করে একটি গাড়ি উল্টে দিয়েছে যাতে এই সংঘর্ষকে ভুয়ো বলে বোঝা না যায়। ঘটনাস্থলের ঠিক আগেই একটি টোলপ্লাজায় সিসিটিভিতে যে দৃশ্য ধরা পড়েছে তাতে দেখা গিয়েছে যে গাড়িতে বিকাশ ছিল সেই গাড়িটি নয়, অন্য একটি গাড়ি উল্টেছে।
তা ছাড়া খবর নেওয়ার জন্য সাংবাদিকরাও গাড়ি করে পিছন পিছন যাচ্ছিলেন কিন্তু ঘটনাস্থলের দু'কিলোমিটার আগেই পুলিশ সাংবাদিকদের গাড়ি আটকে দেয়। তারপরে গুলির আওয়াজ শোনা যায়, সাংবাদিকরা আর কিছু দেখতে পাননি। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী, এঁরা সকলেই বলেছেন, যোগী আদিত্যনাথ তাঁর রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মাফিয়া ডন ও পুলিশের অশুভ আঁতাতের কথা ধামাচাপা দিতেই এই তথাকথিত সংঘর্ষের খবর রটিয়ে বিকাশকে পুলিশের গুলিতে খুন করিয়েছেন। কারণ আদালতে বিকাশ উঠলে সে নিজে বাঁচার জন্য অনেক কথাই হয়তো ফাঁস করে দিতো, যা বিজেপি দল ও সরকারের পক্ষে মোটেও সুবিধাজনক হতো না। একমাত্র শিবসেনা পুলিশের প্রশংসা করে বলেছে, একজন কুখ্যাত খুনি অপরাধী মাফিয়া ডন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে এত বেশি চিৎকার চেঁচামেচির কোনও মানে হয় না। আমরা খুশি যে সমাজ বিরোধী একজন নিকেশ হয়েছে। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই সংঘর্ষের নীতি গণতন্ত্রবিরোধী বলে প্রচন্ড সমালোচনা করেছে।