ভারতে আত্মগোপন করে থাকা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, বা জেএমবির জঙ্গি আব্দুল করিম ওরফে বড় করিমকে কাল গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ডেরা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বহুদিন ধরেই বড় করিমকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স খুঁজছিল। কিন্তু বারে বারে তার কাছাকাছি গিয়েও এমনকি তার বাড়িতে হানা দিয়েও ধরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত গতকাল গভীর রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর থানার সুতি নামে একটি জায়গায় তার খোঁজ মেলে। তাকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স এসটিএফ এবং জেলা পুলিশের একটি দল মিলে গ্রেফতার করতে পেরেছে। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবির প্রধান সালাউদ্দিন সালেহিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি আব্দুল করিমকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে বিহারের বুদ্ধগয়ায় তিব্বতীদের ধর্মগুরু দালাই লামার বক্তৃতা সভায় বোমা বিস্ফোরণের দায়ে পুলিশ খুঁজছিল। এটাকে কলকাতা পুলিশের একটা বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। এসটিএফ-এর প্রধান অপরাজিতা রাই বলেছেন, সালাউদ্দিন সালাহিন বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান। আব্দুল করিম তার হয়ে ভারতে কাজ করত। করিমের মূল কাজ ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া, টাকা-পয়সা যোগানো এবং যে সমস্ত অভিযান তারা করতে চাইছে তার খোঁজখবর দেওয়া ও সাহায্য করা। জেএমবি এখন তাদের মূল সংগঠনকে জামাতুল মুজাহিদিন বলছে, আর তার দুটি শাখা সংগঠনের নাম দিয়েছে জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। মূল সংগঠনটি বাংলাদেশে। তবে ভারত ও বাংলাদেশে এরা দুজনেই ফেরারি আসামির তালিকাভুক্ত, দুই দেশেরই সরকারের খাতায় এদের দু'জনের নামে পরোয়ানা রয়েছে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলা আব্দুল করিম এখানকার সবকিছুর দায়িত্বে ছিল। কিন্তু পুলিশের খাতায় সে জেএমবির জঙ্গি হিসেবেই পরিচিত। বুদ্ধগয়ার সেই বোমা বিস্ফোরণের পর সেই বছরই পুলিশ মুর্শিদাবাদে তার বাড়িতে হানা দিয়েছিল। কিন্তু গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সে বার আব্দুল করিম পালিয়ে যায়। তবে তার বাড়ি থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, জেহাদি কাগজপত্র ও বোমা তৈরির মশলা, ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে এতদিন কিন্তু আব্দুল করিমের আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওকে জেরা করে এখানে জেএমবির কার্যকলাপ আরও কিছু জানা যাবে বলে গোয়েন্দারা আশা করছেন। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর এই আব্দুল করিমই অনেকটা অন্যরকম ভাবে জঙ্গিপনার ছক কষে এবং আগেকার ধরন পুরোপুরি বদলে নতুন ধরন চালু করে। আব্দুল করিমের তৈরি ওই জঙ্গি মডেলের নাম দেওয়া হয় ধুলিয়ান মডেল। এই মডেলই এখন পুলিশের কড়া নজরে।
দীপংকর চক্রবর্তী, ভয়েস অফ আমেরিকা, কলকাতা