নভেম্বরে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে দলীয় ঐক্যের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে সোমবার ১৭ই আগস্ট উইসকনসিনের মিলউয়াকিতে শুরু হয়েছে জাতীয় সম্মেলন। দল থেকে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়োন দেয়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সম্মেলন। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা অনলাইনে ভার্চুয়ালী অংশ নিচ্ছেন সম্মেলনে।
হলিউড তারকা ইভা লংগরিয়া বেস্টনের উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৈরী হওয়া বিভক্তি নিরসণ ও বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করার আহবান জানান ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার।
“মাত্র কয় সপ্তাহ আগে এখানেই জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হলো”।
অন্যান্যবারের মতো এবারও ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে; কিন্তু ভিন্নভাবে। মিলউয়াকীতে একটি স্থান নির্ধারণ করে সেখান থেকে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু অংশ নিচ্ছেন সকলেই যে যার অবস্থান থেকে, ভার্চুয়ালী। বক্তাদের বক্তব্য বেশিরভাগই আগে থেকেই রেকর্ড করা হয়েছিল । উদ্বোধনী দিনে সাবেক ফার্ষ্ট লেডী মিশেল ওবামা জো বাইডেনকে তুলে ধরেন তাঁর নানা গুনাবলীর কথা বলে:
“জো’কে আমি চিনি। তিনি চমৎকার একজন মানুষ যিনি তাঁর বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি দারুণ ছিলেন। অর্থনীতিকে কিভাবে ভালো করতে হয় তা তিনি জানেন। মহামারী মোকাবেলার উপায় জানেন। দেশকে কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয় তা জানেন”।
ভার্মন্ট সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সমস্যা, অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে পরিবর্তনের আহবান জানান আমেরিকানদের প্রতি।
“আমাদের দেশ ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি; অর্থনৈতিক পতনের দোরগোড়ায়; বর্ণবাদ মোকাবেলা করতে হচ্ছে; আমাদের সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি। এসবের মধ্যে এ দেশের প্রেসিডেন্ট এই সংকট মোকাবেলায় অক্ষম”।
মধ্যপন্থী রিপাব্লিকান ও স্বতন্ত্র ভোটারদের সমর্থন পাবার চেষ্টা করছেন ডেমোক্রেটরা। রিপাবলিকান দলের সাবেক নেতা সাবেক ওহাইও গভর্ণর জন কেসিক জো বাইডেনকে সমর্থন করে উদ্বোধনী দিনে বক্তব্য রাখেন।
“আমি আজীবন রিপাবলিকান দলীয় লোক। কিন্তু তাতে আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে দ্বিতীয় সারিতে থাকতে হয়। সেজন্যেই আমি এই সম্মেলনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।
ডেমোক্রেটিক দলের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী, সেনেট ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার সহ অনেক নেতা।
বুধবার বক্তব্য রাখবেন স্পিকার ন্যান্সী পেলোসী, সাবেক ফার্ষ্ট লেডী হিলারী ক্লিন্টন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস।
অন্যদিকে রিপাবলিকান দলীয় কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা ২৪শে আগস্ট নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লটে সংক্ষিপ্ত এক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফা মনোনয়নের জন্য মিলিত হবেন। ২৭শে আগস্ট, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, দ্বিতীয় দফা মনোনয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনে এক ভাষণের মাধ্যমে।
ডেমোক্রেটিক দলের সম্মেলন চলাকালে রিপাবলিকানদের মনোবল বাড়াতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সোমবার কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনী সভায় অংশ নেন।
বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে এখন বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ৭/৮ পয়েন্টে এগিয়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগনের ভোটই যথেস্ট নয়। সাধারন ভোটের পর ৫০টি রাজ্যে এবং রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ইলেক্টরাল কলেজ- চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত করেন প্রেসিডেন্ট ।
রাজ্যগুলোর জনসংখ্যার অনুপাত অনুসারে ইলেক্টরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। বড় রাজ্য যেমন ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসের ইলেক্টরাল কলেজের সংখ্যা্ বেশি, যথাক্রমে ৫৫ ও ৩৮টি। ফলে এই রাজ্যগুলোর ইলেক্টরাল কলেজ ভোট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বেশি জনসংখ্যবহুল রাজ্যে ইলেক্টরাল ভোট বেশি থাকে। ৫৩৮জন ইলেক্টরেটের
মধ্যে ২৭০ জনের সমর্থন যিনি পান তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চুড়ান্তভাবে।
২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারী ক্লিন্টন প্রায় ৩ মিলিয়ন সাধারন ভোট বেশী পেয়েও নির্বাচিত হননি। কারণ তিনি তিনটি রাজ্য - পেনসেলভেনিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে ইলেক্টরেটদের ভোট সামান্য কম পেয়েছিলেন।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকী। এর মধ্যে দুই দলের প্রার্থীরা নানাভাবে করোনা মহামারীর মধ্যে ভোটারদেরকে যার যার কর্মসূচী তুলে ধরে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন।