একদিকে মিয়ানমারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরে নিজেরাই লড়াই করছে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। নানা অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বিরক্ত বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভাগ্য অনিশ্চিত। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে যান জাতিসংঘের একজন বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। বাংলাদেশে ছিলেন ছয়দিন। এই সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছেন কয়েক দফা। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভেতরের খবরাখবর জানার চেষ্টা করেছেন কীভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। গত সেপ্টেম্বরে যে জায়গাটায় রোহিঙ্গাদের অন্যতম নেতা মুহিবুল্লাহ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন সেটাও পরিদর্শন করেন। তিনি এ নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন। জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারকে। এক সংবাদ সম্মেলনেও তার সফর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্ট কীভাবে লাঘব হতে পারে তারও একটা রূপরেখা তৈরি করেছেন।
মি. অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে আরসার জঙ্গিরা হত্যা করেছে। ক্যাম্প সফরকালে তিনি এটা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আরসার সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শুধু হত্যা নয় নির্যাতন করছে, অপহরণের সঙ্গেও তারা জড়িত। যদিও বাংলাদেশের তরফে এটা অস্বীকার করা হয়েছে।
টম অ্যান্ড্রুজের মন্তব্যের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, আরসার উপস্থিতি সম্পর্কে তার কাছে কোনো খবর নেই। রোহিঙ্গা যুব সমিতির প্রতিষ্ঠাতা খিং মং মি. অ্যান্ড্রুজের বক্তব্য মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, তারা এ নিয়ে সরকারকে বহুবার জানিয়েছেন। টম অ্যান্ড্রুজ অবশ্য বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, যারা মানবাধিকারকে মূল্য দেয় তারা সকলেই বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তার ধারণা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই দেশে ফিরে যেতে চায়। মি. অ্যান্ড্রুজ রোহিঙ্গাদের সীমাহীন কষ্টের অবসানকল্পে তিনটি সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা প্রদান, শিক্ষার সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও জীবিকার সুযোগ তৈরি করা। রোহিঙ্গাদের জন্য আরও বেশি আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর জোর দেন মি. অ্যান্ড্রুজ। বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
রোহিঙ্গা স্কুল বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি
জাতিসংঘসহ বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও বাংলাদেশের তরফে বলা হয়েছে, স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেছেন, কোনো স্কুল বন্ধ করা হচ্ছে না। ক্যাম্প এলাকায় শিক্ষা হবে এক পদ্ধতিতে। তবে প্রাইভেট, কমার্শিয়াল স্কুল ও কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
ঢাকা সফররত জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এসব প্রাইভেট স্কুলগুলো রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিবিরের অভ্যন্তরে সকল প্রাইভেট স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের একটি পুরো প্রজন্মকে কার্যত অশিক্ষিত হয়ে বড় হতে দিতে পারি না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউনিসেফের অধীনে যে তিন হাজার শিক্ষাকেন্দ্র আছে তার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। মূলত উগ্রবাদ বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদানের কারণেই এসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, এতে করে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষার অধিকার হারাবে।